আবির দত্ত, কলকাতা: কলকাতার বুকে ধাওয়া করে ধরা হয়েছিল দুই সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে। তাদের জেরা করেই মিলেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য়। বাড়িতে বসে দীর্ঘ ২ বছর ধরে ওই দুজন জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়েছে, এমনটাই উঠে এসেছে পুলিশের জেরায়। জঙ্গি গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তারা। জঙ্গি কার্যকলাপের দীর্ঘদিন ধরেই বাংলার মাটি ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে বলে তাঁদের মত। এমন ঘটনা রুখতে আরও বেশি করে নজরদারি চালানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।         


কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা:
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার দেবাশিস দাস বলেন, 'ISIS-এর যে পরিকল্পনা, তাতে ভারতে নাশকতা চালানো এবং ভারতে জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। STF যে এদের ধরেছে এটা সাধুবাদ জানানোর মতো। এরা যেভাবে কাজ করে তাতে এরা যে খুব বড় চাঁই ধরিয়ে দিতে পারবে এমন না। ছোট ছোট মডিউলে কাজ হয়। তবে এদের থেকে ভাল করে কথা বের করতে হবে। বহু তথ্য় জানা সম্ভব। ২ জন যে ধরা পড়ল, এটাও মানতে হবে যে ২০০ জন আরও রয়েছে যারা ধরা পড়ছে না। তাই আরও সতর্ক হতে হবে।'


অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পৃথ্বীরঞ্জন দাস বলেন, 'এদের উপর নজরদারি রাখতে গিয়ে অনেকসময় নানা বিড়ম্বনায় পড়েছি। সেক্ষেত্রে এসটিএফ যে দুজনকে ধরল, তার জন্য এসটিএফকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে আমাদের ইনটেলিজেন্স নেটওয়ার্ক দুর্বল। রাজ্যের প্রশাসন ততটা গা লাগায় না।' জঙ্গি কার্যকলাপ রোখার জন্য সারা দেশে ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার চালুর জন্য সওয়াল করেছেন তিনি। এই কাজের জন্য পুরো পরিকল্পনাও ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পৃথ্বীরঞ্জন দাস বলেন, 'এক্ষেত্রে পুরো পেশাদারিত্ব নিয়ে সারা দেশে ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার যদি চালু হয়, তাহলে এদের মতো লোকজনকে দ্রুত ধরা যাবে।'


বিএসএফ এর প্রাক্তন আইজি সমীর মিত্র বলেন, 'কলকাতা জঙ্গিদের স্যাংচুয়ারি। এরা যারা ধরা পড়ল, তারা হিমবাহের চূড়া। আমাদের যতটা সতর্ক হওয়া দরকার, আল কায়দা, আইসিস-এর প্রতি যতটা সতর্ক থাকা দরকার, ততটা আমরা নই। পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ, অস্ত্র জোগাড়, আত্মঘাতী আক্রমণের ছক ছিল। যে সাঙ্কেতিক ভাষায় যোগাযোগ করা হচ্ছিল, সেটা ডি-কোড করা দরকার। এটাও দেখতে হবে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কিনা।'


গ্রেফতার হওয়া ২ জঙ্গিকে জেরা করে নানা রকম তথ্য মিলেছে। STF সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ বছর ধরে জঙ্গি সংগঠন ISIS-এর সঙ্গে যোগ রয়েছে মহম্মদ সাদ্দাম ওরফে সাদ্দাম মল্লিকের। STF-এর দাবি, সুইসাইড স্কোয়াড সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান করছিল সাদ্দাম। মিলেছে পাক-যোগও। পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত মহম্মদ সাদ্দাম। কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল এই দুই সন্দেহভাজন IS জঙ্গি? আপাতত এ সবের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। 


আরও পড়ুন: আজ থেকে শুরু গঙ্গাসাগর মেলা, ভিড় জমতে শুরু করেছে শহরে