পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : 'নেশা'র টানে ওঁরা বার বার ছুটে গেছেন পাহাড়ে। এবারও ছোটেন। কিন্তু, তা যে পরিবারের এত উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে উঠবে তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। এক-দু'দিনের বিষয় নয়। নয় নয় করে পাঁচ পাঁচটা দিন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিং করতে যাওয়া বাঁকুড়ার ৭ পর্বতারোহীর। এদিকে উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর দেখার পর থেকেই উদ্বেগ বাড়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। একদিকে যোগাযোগ হচ্ছে না, তো অন্যদিকে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের একের পর এক খবর- সবমিলিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছিল এই পর্বতারোহীদের পরিবারে। অবশেষে শেষ আতঙ্কের প্রহর কাটল। টানা পাঁচ দিন পর শুক্রবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে খবর আসে, তাঁরা সুস্থ ও ভালো আছেন। ৫ দিনের চরম উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের রাত-দিন কাটিয়ে টেলিফোনের খবরে স্বস্তি বাঁকুড়ার ৭ পর্বতারোহীর পরিবারে।
পাহাড়ের নেশায় বার বার ব্যাগপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন ওঁরা। বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেই একের পর এক বিভিন্ন পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে অংশ নিয়েছেন। এবারও তাঁদের ট্রেকিং ছিল উত্তরাখণ্ডের হর-কি-দুন ও রুইনসারা তালে। সেই লক্ষ্য নিয়েই নবমীর দিন বাঁকুড়ার ওন্দা থানার আগড়দা ও পুরুষোত্তমপুর গ্রাম থেকে ৭ পর্বতারোহী রওনা দেন উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশ্যে। ১৭ তারিখ রবিবার সকালে পরিবারকে তাঁরা জানান, দেরাদুন থেকে সাঁকরির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছেন। ব্যস, তার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাঁকুড়ার ৭ পর্বতারোহীর।
এদিকে উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর টিভিতে দেখার পর থেকেই উদ্বেগ বাড়তে থাকে পরিবারগুলির। তখন থেকেই ফোনে চেষ্টার শুরু। কিন্তু, বার বার ফোন করেও সম্ভব হয়নি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। রবিবার থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন । রীতিমতো দুশ্চিন্তার দিন-রাত কাটতে থাকে পর্বতারোহীর পরিবারগুলির। উৎকণ্ঠার মধ্যে এক একটা মুহূর্ত কাটানো কঠিন হয়ে পড়ে তাঁদের কাছে।
এই পরিস্থিতিতে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের তরফে পরিবারগুলির পাশে থাকার ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া ৭ পর্বতারোহীর খোঁজ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিভিন্নভাবে ট্রেকিং টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। অবশেষে টানা ৫ দিন পর শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়িতে ফোন করে তাঁরা জানান, তাঁরা সুস্থ ও ভাল আছেন। সাঁকরিতে পৌঁছেছেন। এই খবরে উদ্বেগ কাটে বাঁকুড়ার ৭ পর্বতারোহীর পরিবারে। শনিবার সকালে সাঁকরি থেকে বাঁকুড়ার ৭ পর্বতারোহী রওনা দেন দেরাদুনের উদ্দেশ্যে । সেখান থেকেই শনিবার রাত ১০ টার ট্রেনে তাঁরা রওনা দিচ্ছেন বাড়ির পথে। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে। স্বস্তিতে বাঁকুড়ার এই পরিবারগুলি।