সন্দীপ সরকার, কলকাতা : ১৭ দিনের স্নায়ুযুদ্ধে এল সাফল্য়। উত্তরকাশীর ( Uttarkashi Tunnel Collapse )  সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককেই, মঙ্গলবার সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হল। যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ার পর, হাতে ধ্বংসস্তূপ কেটে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছোন উদ্ধারকারীরা। এর পর একে একে আটকে পড়া মানুষরা অন্ধকারের শেষে আলোর দিশা দেখেন। এর মধ্যে ৩ জন ছিলেন বাংলার। 


 নানা বাধা বিপত্তি কাটিয়ে, সুড়ঙ্গ থেকে একে একে উদ্ধার করা হয বাংলার ৩ শ্রমিক-সহ ৪১ জনকে। উদ্ধার হওয়ার পর ফোনে কথা বলেন তাঁরা পরিবারের সঙ্গে। কী হবে? কী খবর আসবে? প্রতিটা মুহূর্ত ছিল উৎকণ্ঠায় ভরা। রুদ্ধশ্বাস দিন কাটিয়ে অবশেষে বাস্তবটা স্বপ্নের মতো লাগছে তাঁদের। এরই কোনও কোনও শ্রমিক, কোনও পরিবারের গলায় আক্ষেপ, বাংলায় কাজ থাকলে বাইরে যেতে হত না ! 


'বাংলায় কাজ নেই'


উদ্ধারের পরই পুরশুড়ার বাড়িতে ফোন করে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন সৌভিক পাখিরা। তারপর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মা বললেন, 'আমি বললাম বাবা কেমন আছিস রে...বলল, আমি ঠিক আছি, ১৭ দিন যে টানেলে ছিলাম তার কোনও কিছু নেই। ছেলের হাসিমুখ দেখতে পাচ্ছি, বুক থেকে পাথর নেমে গেল।' এরপরই তার গলায় ঝরে পড়ল আক্ষেপ । বাংলায় কাজ নেই, তাই বাধ্য হয়ে বাইরে কাজ করতে হচ্ছে। ছেলে ইলেকট্রিক্যাল ডিপ্লোমা করেছে, চাষ করে কি আর সংসার চলে তাই যেতে হচ্ছে। মা হিসেবে চাই ছেলে এখানেই থাকুক। সরকারের কাছে সৌভিকের মায়ের আবেদন, ছেলের যেন এখানেই কাজ পায়। ছেলের হাসি মুখ দেখার পরই, পাড়ার শিব মন্দিরে গিয়ে পুজো দিলেন সৌভিকের মা। 


 'রাজ্যে যদি কাজ থাকত ...'


১৭ দিন পর বন্দিদশা কেটেছে কোচবিহারের তুফানগঞ্জের মানিক তালুকদারেরও। সকাল থেকেই পরিবারের চোখ ছিল টিভিতে। অবশেষে সন্ধেয় উদ্ধারের পর শঙ্খ বাজিয়ে, উলুধ্বনিতে উদযাপন করা হয়। উদ্ধার হওয়ার পর, ভিডিও কলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সুস্থ থাকার কথা জানান মানিক। আর মানিকের ছেলের গলাতেও সেই আক্ষেপ। ''রাজ্যে যদি কাজ থাকত বাইরে কেউ যেত না''। তিনি বললেন, আমি চাই রাজ্যে শিল্প হোক। শিল্প উন্নত হলে তবেই তো রাজ্য উন্নত হবে। 


মঙ্গলবার যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ার পর, হাতে ধ্বংসসতূপ কেটে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছন উদ্ধারকারীরা। সুড়ঙ্গ থেকে বেরনোর পর রাতেই শ্রমিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টানেলের মুখের সামনে তৈরি মন্দিরে করা হয় পুজো। চিনিয়ালিসৌরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের। এখনও পর্যন্ত হাসপাতালে থাকাকালীন তাঁদের কোনওরকম শারীরিক সমস্যা হয়নি। সকালে তাঁদের হালকা খাবার দেওয়া হয়।