কলকাতা: একেবারে শুরুর দিন থেকে রাজ্যের সঙ্গে বার বার সংঘাতে জড়িয়েছেন তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাগযুদ্ধ চরমে পৌঁছতে দেখা গিয়েছে একাধিক বার। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, তাঁকে রাজ্য থেকে সরাতে চেয়ে বার বার কেন্দ্রকে চিঠিও লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বাংলার সদ্য় প্রাক্তন রাজ্যপাল, সেই জগদীপ ধনকড়কেই (Jagdeep Dhankahr) উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। তবে এই ঘোষণার দিন কয়েক আগেই পাহাড়ে ধনকড়ের সঙ্গে ‘সৌজন্য’ বৈঠকে দেখা যায় বাংলার মুখ্য়মন্ত্রীকে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা উপস্থিত ছিলেন সেই বৈঠকে। তাতেই প্রশ্ন উঠছে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কি ধনকড়কে সমর্থন জানাবে তৃণমূল? জোড়াফুল শিবির যদিও প্রকাশ্যে বিরোধীদের প্রার্থীকেই সমর্থনের কথা বলছে, কিন্তু তাদের অবস্থান নিয়ে ধন্দ কাটছে না (Vice President Election)।
উপরাষ্ট্রপতি পদে কাকে সমর্থন তৃণমূলের!
২০১৯ সালে ধনকড় রাজ্যপালের পদে শপথ নেওয়ার পর থেকে পরবর্তী তিন বছর তাঁর সঙ্গে তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারের নজিরবিহীন সংঘাত দেখা গিয়েছে। একবার নয়, বার বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চোখে পড়েছে। মমতা এবং ধনকড় স্বয়ংও দফায় দফায় বাগযুদ্ধে জড়িয়েছেন। পরস্পরকে আক্রমণ করতে গিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক সব অভিযোগ তুলেছেন।
এক দিকে, ধনকড়কে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে উল্লেখ করেলন মমতা। অন্য দিকে, মমতা সরকারের আমলে বাংলা গ্যাস চেম্বার হয়ে উঠেছে, গণতন্ত্রের বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে বলে পাল্টা মন্তব্য ছুড়ে দেন ধনকড়। রাজ্য এবং রাজ্য়পালের মধ্যে এমন বেনজির সংঘাত আগে সে ভাবে চোখে পড়েনি। তাই ধনকড় উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পেতেই, মমতা তথা তৃণমূলের অবস্থান জানতে আগ্রহী রাজনৈতিক মহল। কারণ বিজেপি বিরোধী শিবিরের অন্যতম মুখ হলেও, ধনকড়কে সরানোও মমতার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
ধনকড়ের বিরুদ্ধে এর আগে, বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন স্বয়ং মমতা। তিন দশক আগের জৈন হাওয়ালা কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে ধনকড়কে ‘আদ্যোপান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য় ছিল, ‘‘উনি একজন আদ্যোপান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ। জৈন হাওয়ালা মামলায় নাম রয়েছে ওঁর। এমন একজনকে কি ভাবে রাজ্যপাল করতে সম্মতি দিল কেন্দ্র?’’
আবার মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে ধনকড়কে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার জন্য এটা খুব সমস্যার হয়, যখন কেউ বলেন, পশ্চিমবঙ্গ গণতন্ত্রের গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। আমার জন্য এটা খুব সমস্যার হয়, যখন কেউ বলেন, পশ্চিমবঙ্গ দুর্নীতির আস্তানা। এখন এর সঙ্গে আরও দু-তিনটে মারাত্মক অভিযোগ জুড়ে গিছে, যেমন, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ।’’
তবে সেখানেই থামেনি বাগযুদ্ধ। ধনকড়কে কটাক্ষ করতে গিয়ে মমতাকে বলেন, ‘‘একটা বাচ্চা হলে বকে চুপ করানো যায়... রাজ্যপালের কয়লার কাজ থাকলে যেতেই পারেন। উনি তো ওদেরই লোক।’’ জবাবে ধনকড় বলেন, ‘‘এটা ক্রিকেট টিম নয় যে সবাইকে নামিয়ে দেবেন... আমাকে আক্রমণের জন্য একটা আলাদা বিভাগ করুন... অন্তত বাকি মন্ত্রীরা মন দিয়ে কাজ করতে পারবে।’’
তৃণমূলের অবস্থান ঘিরে বাড়ছে ধন্দ
সাংবিধানিক পদে থেকে রাজ্য়পাল বিশেষ একটি দলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ করেন মমতা। বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর হৃদ্য়তা বোঝাতে তৃণমূলের তরফে রাজ্য়পালকে ‘পদ্মপাল’ বলে কটাক্ষও করা হয়। রাজ্য়পালকে ট্য়ুইটারে ব্লক করে দিয়েছেন বলেও জানান মমতা। কিন্তু এনডিএ-র তরফে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে ধনকড়ের নাম ঘোষণা হওয়ার পর, ১৭টি বিরোধী দলের উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী চয়ন থেকে সোমবার দিল্লিতে শরদ পওয়ারের বাড়িতে বিরোধীদের বৈঠক, কোনওটিতেই তৃণমূলের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাই তৃণমূলের অবস্থান ঘিরে জল্পনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।