কলকাতা: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন বারবার বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। আইসিকে কুকথা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এবার নিজের অভিজ্ঞতা সামনে আনলেন প্রাক্তন উপাচার্য। শুধুমাত্র অনুব্রত মণ্ডলই নন, তাঁর অনুগামীদের দ্বারাও চরম হেনস্থা হতে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
বোলপুর থানার আইসিকে অনুব্রত মণ্ডলের কু-কথাকাণ্ডে তোলপাড় পড়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে এবার মুখ খুললেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলছেন, 'অনুব্রত মণ্ডলের মাথায় যদি দিদির হাত না থাকত তাহলে আজকে জামিন অযোগ্য ওয়ারেন্টের পরে অনুব্রত মণ্ডল কীভাবে ঘুরে বেড়ায়? ফোনে কিন্তু উনি কোনওদিন ভদ্রভাষায় কথা বলেননি। এটা বোধহয় ওঁর জন্মগত একটা রোগ। সুতরাং এই যে লিটন হালদারকে যে কথাগুলো বলেছেন এটা খুবই কদর্য এটা মানে শোনা যায় না। কিন্তু, এটা যে উনি বলতে পারেন এ ব্য়াপারে কিন্তু আমার সেরকম কোনও সন্দেহ নেই। কারণ আমি নিজেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারি যে এটা কিন্তু হামেশাই শুনতে হয়েছে। কয়লাকে তুমি যতই ধোও তার রঙ কি কালো থেকে সাদা হবে?'
উপাচার্য থাকাকালীন বারবার বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। তীব্র আক্রমণ করেছেন। অনুব্রতর মুখে এই কথাও শোনা গিয়েছে, 'পাগল ভিসি, ও যদি মনে করে আমি যা খুশি করব, মানব না, বিশ্বভারতীর ভিতরে গিয়ে ফ্ল্যাগ লাগিয়ে দেব'। কখনও আবার অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, 'উপাচার্য পাগল। অশিক্ষিত।'
আইসিকে কুকথা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এবার নিজের অভিজ্ঞতা সামনে আনলেন প্রাক্তন উপাচার্য। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্য়ুৎ চক্রবর্তী বলছেন, 'আমি যখন উপাচার্য ছিলাম সে সময় আমার সম্পর্কে উনি শুধুমাত্র কদর্য ভাষা প্রয়োগ করেছেন তা নয়, আমার সঙ্গে কদর্য ব্য়বহারও করেছেন। তার কতগুলো উদাহরণ আমি দিতে চাই, একদম প্রথমে যেটা বলব, যে অনুব্রত মণ্ডল তাঁর ক্ষমতা দেখাবার জন্য আমাদের বিশ্বভারতীর একটা ঐতিহ্য়বাহী গেট, সেই গেটটাকে ভাঙা হয়। এই ভাঙার পিছনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল এবং তৎকালীন বীরভূমের একজন MLA. সবচেয়ে দুঃখের বিষয় পুলিশের যে থানা সেটা আমাদের ক্য়াম্পাসে। অনুব্রত মণ্ডলের কথা অনুযায়ী কাজ যদি না হত, তিনি আমাকে ধমকে দিতেন।'
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আরও বিস্ফোরক দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, 'অনেকরকম ভাবে গুলি করে মেরে ফেলব, পাগল। তবে একটা বলব, আমার স্ত্রী এবং মাকে উনি কখনও সেভাবে গালাগালি দেননি, কিন্তু আমার পরলোকগত পিতাকে উনি বরবার নিয়ে এসেছেন। বাবা তুলে যে ধরনের গালাগালি দেওয়া যায়, সব গালাগালি আমি শুনেছি। উনি অবলীলাক্রমে উনি আমাকে গালি দিয়ে যেতেন।' বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আরও বলেছিলেন, '২১ দিন উনি আমাকে উনি বন্দি করে রেখেছিলেন, উনি এবং ওঁর বশংবদ যারা আছে তাঁরা আরও মারাত্মক। তাঁরা এসে আমাকে শুধুমাত্র গালিগালাজ করত তা নয়, আমাকে অফিসে তালাবন্দ করে রেখে দিত। একদিন, দুদিন এরকম বহুবার ছিলাম আমি। সবচেয়ে বেশি যেটা হয়েছিল সেটা ২১ দিন। ২১ দিন আমাকে বন্দি করে রেখেছিলো, এবং সেই বন্দি অবস্থায় শেষদিকে এমন অবস্থা হয়েছিল জল ছিল না। জলের লাইন কেটে দিয়েছিল। বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল। শেষে আমি সেদ্ধ ভাত, আমি আমার ছেলে ছিল, আমার মেয়ে ছিলাম। সেই ২১ দিন কাটার পরে পুলিশ কিন্তু কোনও সাহায্য় করেনি। আমাকে সাহায্য করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্ট।'
সব মিলিয়ে, অনুব্রত মণ্ডলের কু-কথাকাণ্ডে বিতর্ক চলছেই।