ভাস্কর মুখোপাধ্যায় এবং আবির ইসলাম, বীরভূম: শান্তিনিকেতনে (Shantiniketan) এমন একটি জায়গা যেখানে প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন হয় ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে। আর সেই প্রকৃতিকে ঘিরেই সারা বছর বিশ্বভারতীর (Visva Bharati) শান্তিনিকেতনে লেগে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। শান্তিনিকেতনের নান্দনিকতার ইতিহাসে ‘বসন্তোৎসব’ অন্যতম। শুক্রবার বসন্ত ঋতুর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে "বসন্ত আবাহন" করল পাঠভবনের ছাত্রছাত্রীরা। নাচে গানে মেতে উঠল পাঠভবনের অঙ্গন। বসন্ত উৎসবের আগে, প্রতিবছর পাঠভবনে বসন্ত আবাহন হয়ে থাকে।

  


প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের প্রথম দিনে শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে বসন্ত ঋতুকে স্বাগত জানাতে পালন করা হয় বসন্ত আবাহন।  এদিন সকালে বসন্ত আবাহন উৎসবে পাঠভবনের ছাত্র-ছাত্রীরা মিলিত হয়ে বসন্তের গান, নাচ উপস্থপনা করে শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জ জহর বেদিতে।  


শান্তিনিকেতন গৃহ থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয় “ওরে গৃহবাসী খোলদ্বার খোল লাগলো যে দোল” বৈতালিকের মধ্য দিয়ে। শোভাযাত্রার শেষে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় আম্রকুঞ্জের জহর বেদিতে। 


উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৭ ঋতু উৎসব করেছিলেন। সেটাই ছিল প্রথম বসন্ত উৎসব। শ্ৰী পঞ্চমীতে সেটা পালিত হয়। কারণ এই নিয়ে মতান্তর আছে। পরে মাঘী পূর্ণিমাতে, শ্রী পঞ্চমীতে শান্তিনিকেতনে একাধিকবার বসন্ত উৎসব হয়েছে। ১৯২৫ সালে শ্রী পঞ্চমীতে আম্রকুঞ্জে প্রথম বসন্তোৎসব পালন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দোলের দিন যে বসন্ত উৎসব হয়েছে তা নয়। আবার দোলের দিনও কখনও কখনও হয়েছে। ১৯৩৭ সালে মাঘীপূর্ণিমা তিথিতে বসন্তোৎসবে প্রভাতী বৈতালিকের গান ছিল ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।’ ১৯২০-র দশকে বিশ্বভারতী হওয়ার আগের পর্বেও দোলের দিন শান্তিনিকেতনে বসন্ত-উদ্‌যাপন ছিল, কিন্তু রীতিমতো আশ্রমিক-উৎসব সম্ভবত তখনও তা হয়ে ওঠেনি। তার জন্য অপেক্ষা ছিল ১৯২৩ সাল পর্যন্ত। তবে ১৯২৩-এর পরেও যে বসন্তোৎসবের অবিচ্ছেদ্য ও ধারাবাহিক নথি পাওয়া যায় তা নয়। শান্তিদেব ঘোষের সাক্ষ্য থেকে মনে হয়, সম্ভবত ১৯৩২ থেকেই ‘ওরে গৃহবাসী’ গাইতে গাইতে শোভাযাত্রার চল শুরু হয়েছিল। ১৯৩৪ সালে সেই গানের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল নাচ।                                     


তিরিশের দশক থেকে বসন্ত-উৎসব উপলক্ষে কবিকে বিশেষ ভাষণ দিতেও দেখা যায়। কবির প্রয়াণের পরও বসন্তোৎসবে ভাষণের এই ধারা অব্যাহত থাকে কিছুকাল। পরবর্তীতে ক্ষিতিমোহন সেন এই নান্দনিক উৎসবের সঙ্গে উপযুক্ত মাঙ্গলিক মন্ত্রও যোগ করেছিলেন।


সেই উৎসবের ধারাই আজও বহন করে চলেছে বিশ্বভারতী।