ভাস্কর মুখোপাধ্য়ায়, বীরভূম: একাধিক শর্ত তুলে শান্তিনিকেতনের (Shantiniketan) পূর্বপল্লী মাঠে মেলা আটকে দিল বিশ্বভারতী (Visva Bharati University) কর্তৃপক্ষ। এমনই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন প্রাক্তনী থেকে আশ্রমিক সকলেই।
কী অভিযোগ:
প্রাক্তনী ও আশ্রমিকদের অভিযোগ, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়ে দিয়েছিল যে ২০২৩ সালে পৌষ মেলার আয়োজন করবে না। এরপরেই মেলা না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছিল সাধারণ বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন জানায় তারা মেলার আয়োজন করবে। বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে পৌষ মেলা আয়োজন করবে জেলা প্রশাসন। তারপরেই বোলপুরের মহকুমা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বেশ কিছু শর্ত ও প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে সেখানে।
১. 'গ্রীন ট্রাইবুনাল' বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গণে পৌষমেলার (Poush Mela) আয়োজন নিয়ে যে শর্তগুলি বেঁধে দিয়েছে তা রক্ষা করা সম্ভব হবে কি না।
২. বিশ্বভারতী এবং শান্তিনিকেতন (Shantiniketan Trust) ট্রাস্ট যেহেতু এই বছর পৌষমেলার আয়োজন করছে না, তাই ওই প্রাঙ্গণে বোলপুর মহকুমা প্রশাসন মেলার আয়োজন করলে, যদি কোনও আইনি জটিলতা তৈরি হয়, জেলা প্রশাসন তার সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করতে সম্মত হবে কিনা৷
৩. বিশ্বভারতীর সাংস্কৃতিক এবং নান্দনিক রুচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই মেলা অনুষ্ঠিত করা যাবে কি না৷
৪. 'গ্রীন ট্রাইবুনাল' নির্দেশিত সময়ের ভিতর মেলা শেষ করে, মেলার মাঠটি পরিষ্কার করে, মহকুমা প্রশাসন বিশ্বভারতীকে পূর্ববস্থায় ফিরিয়ে দিতে পারবে কি না৷
৫. মেলা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় বোলপুর মহকুমা প্রশাসন বহন করতে পারবে কি না৷
৬. মেলা প্রাঙ্গণে মেলা করার জন্য বিশ্বভারতীর অনুমতি ছাড়া, মেলার জন্য প্রয়োজনীয় বাকি যাবতীয় অনুমতি বোলপুর মহকুমা প্রশাসন নিজেদের উদ্যোগে নিশ্চিত করবে কি না।
৭. মেলা চলাকালীন বিশ্বভারতীর ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপক-কর্মীদের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও পঠনপাঠনের পরিবেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুনিশ্চিত করা যাবে কি না।
৮. ২০১৯ সালে পৌষমেলার শেষে নির্ধারিত সময়ে মাঠ ফাঁকা করতে গিয়ে বিশ্বভারতীর কর্মীদের নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, যা শেষ পর্যন্ত শান্তিনিকেতন থানায় কয়েকটি ফৌজদারী মামলা হিসাবে নথিভুক্ত হয়। এই মামলাগুলির জন্য বিশ্বভারতীর কর্মীদের মনোবল অনেকটাই ভেঙে গিয়েছে। বিশ্বভারতীর সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সুসম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে, এই মামলাগুলির নিষ্পত্তির মাধ্যমে কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গণে এবছরের পৌষমেলা সহায়ক হতে পারে কি না।
৯. শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট মেলা প্রাঙ্গণে মেলা করার জন্য বিশ্বভারতীকে কুড়ি হাজার টাকা প্রদান করে বিশ্বভারতীর কৃতজ্ঞতাভাজন হয়ে এসেছে। মেলা প্রাঙ্গণ ব্যবহার করা বাবদ মহকুমা প্রশাসন বিশ্বভারতীকে অন্তত সেই পরিমাণ টাকা দিতে পারবে কিনা
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কয়েকটি আশ্বাস পেলে, শুধুমাত্র এই বছরের জন্য, বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গণে বোলপুর মহকুমা প্রশাসনকে মেলা করতে দেওয়ার বিষয়ে বিশ্বভারতীর কোনও আপত্তি নেই। এদিকে এই বিষয়ে রবিবার জেলা প্রশাসনের তরফে বিশ্বভারতীকে পাল্টা চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, আদালতের বিষয়গুলিতে জেলা প্রশাসনের কিছু করার নেই। এই বিষয়ে জেলাশাসক বিধান রায় জানিয়েছেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের চিঠির উত্তর দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার জানান, 'পূর্বপল্লীর মাঠ বিশ্বভারতীর, তারা নাও দিতে পারে। কিন্তু যে শর্তগুলি জুড়ে দিয়েছে তার থেকে স্পষ্ট যে তারা মেলা করার জন্য জেলা প্রশাসনকে মাঠ দিতে চায় না।'
এই বিষয়ে বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিং বলেন, 'সাধারণ মানুষ বিশ্বভারতীর মেলা না করার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। সেখান থেকে বাঁচতে এই সব শর্ত আরোপ করা হয়েছে। মানুষ বুঝতে পারছে এখনও প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নির্দেশে সব হচ্ছে।'
বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠনের সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের অভিযোগ, 'সংবিধানের মূল কথা হল প্রশাসন বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে না। অথচ বিশ্বভারতীর রেজিষ্ট্রার তথা আইন (লিগাল) অফিসার জেলা প্রশাসনকে পৌষমেলা করার জন্য মাঠ প্রদান করার নামে উদ্বেগের ছদ্মবেশে যে শর্ত বা দাবি রেখেছেন তা আদতে জেলা প্রশাসনকে ব্ল্যাকমেল করে, তাদের দিয়ে বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার একটা বেআইনি প্রয়াস।'
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এই শর্ত মানা সম্ভব নয়। ডাকবাংলো মাঠে পৌষ মেলা করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গ সফর, টেট পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে দিলীপ