কলকাতা:ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে ঘিরে রণক্ষেত্র মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান। সকাল থেকে একাধিক জায়গায় মোতায়েন বিশাল পুলিশ বাহিনী। ওয়াকফ-অশান্তিতে তপ্ত মুর্শিদাবাদে, সংযত থাকার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর।
এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'সব ধর্মের সবার আছে আবেদন, আপনারা দয়া করে শান্ত ও সংযত থাকুন। ধর্মের নামে কোনও অ-ধার্মিক আচরণ করবেন না। প্রত্যেক মানুষের প্রাণই মূল্যবান, রাজনীতির স্বার্থে দাঙ্গা লাগাবেন না। মনে রাখবেন, এই আইন কিন্তু আমরা করিনি। উত্তর যা চাওয়ার কেন্দ্রের কাছে চাইতে হবে। আমরা ওয়াকফ আইনকে সমর্থন করি না। যাঁরা উস্কানি দিচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেব। কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মের অপব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না, শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখুন, বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর।
আরও পড়ুন, ওয়াকফ-অশান্তিতে 'একের পর এক রেল স্টেশনে হামলা' ! রেলমন্ত্রীকে চিঠি শুভেন্দুর..
টানা ১৩ ঘণ্টা বিতর্ক এবং ভোটাভুটির পরে বুধবার মধ্যরাতের পর লোকসভায় পাস হয় ওয়াকফ সংশোধনী বিল, ২০২৫। সংসদের দুই কক্ষে পাস হওয়ার পর সই করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আইনে পরিণত হল ওয়াকফ সংশোধনী বিল, ২০২৫। কেন্দ্রের দাবি, এর ফলে সার্বিক ভাবে মুসলিমদের উন্নতি হবে। ক্ষমতায়ন হবে মুসলিম মহিলাদের। কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, এর আইন ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতাকে খর্ব করে মুসলিমদের অধিকার হরণ করবে।
এ নিয়ে প্রথম থেকেই তীব্র বিরোধিতা করে আসছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, মোদি সরকারের এই উদ্যোগ ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতাকে খর্ব করে মুসলিমদের অধিকার হরণ করবে। এই প্রেক্ষিতে, শুক্রবার পার্ক সার্কাসে বিলের প্রতিবাদে সরব হয় জয়েন্ট ফোরাম অফ ওয়াকফ প্রোটেকশন। বিক্ষোভকারীরা পার্ক সার্কাস মোড়ে ব্যারিকেড সরিয়ে দিলে বাধা দেয় পুলিশ। শুরু হয় বচসা। বিক্ষোভ সভায় উপস্থিত ছিলেন কলকাতা খিলাফত কমিটির চেয়ারম্যান মন্ত্রী জাভেদ খান সহ অনেকে। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন -দীর্ঘ সময়কালজুড়ে ওয়াকফ পদ্ধতিতে কোনও স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা ছিল না। তার জেরে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মুসলিম মহিলারা। এতকাল যাবৎ গরিব মুসলিমদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন ওয়াকফ আইনে স্বচ্ছতা আসবে। সুনিশ্চিত হবে মানুষের অধিকার।
কেন্দ্রের যুক্তি, এর ফলে সার্বিক ভাবে মুসলিমদের উন্নতি হবে। মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাসে ‘হস্তক্ষেপ’ করবে না নতুন আইন। ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে অস্বচ্ছতা দূর হবে। মুসলিম মহিলাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির দিশা দেখাবে। মুসলিম ছাত্রীদের বৃত্তি, মহিলাদের স্বাস্থ্য ও মাতৃত্বকালীন সুবিধা, দক্ষতা বৃদ্ধি, মহিলা উদ্যোগীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের রাস্তা খুলে দেবে নতুন আইন। দরিদ্রদের জীবনযাপনের মান উন্নত করবে।দেশে ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা ৪.৯ লক্ষ থেকে বেড়ে ৮.৭২ লক্ষ হয়েছে। এই পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি সঠিক ভাবে পরিচালিত হলে শুধু মুসলমানদের জীবনকেই উন্নত হবে না, সমগ্র দেশের ভাগ্যও বদলে দেবে।