কলকাতা: নতুন বছরের প্রথম দিনও ভিটেহারা বহু মানুষ (Murshidabad Chaos)। ত্রাণ শিবিরে বসে চোখের জল ফেলছেন। ওয়াকফ-বিরোধী আন্দোলনে হিংসার আগুন কারও ঘর কেড়েছে, কেউ হারিয়েছেন প্রিয়জনকে। কেন এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হল এতগুলো মানুষকে? দায় নিতে হবে সরকারকেই। নিন্দায় সরব হয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
চোখের সামনে খুন হয়ে গেছেন প্রিয়জন। অশান্তির আগুনে কারও ঘর জ্বলেছে, কেউ হারিয়েছেন রুজি-রুটি। প্রাণভয়ে গ্রামকে গ্রাম ফাঁকা হয়ে গেছে। কোনওরকমে প্রাণ-মানটুকু বাঁচিয়ে এক কাপড়ে পরিবারের হাত ধরে ঘর ছাড়তে হয়েছে কাউকে, যে যন্ত্রণা উস্কে দিয়েছে দেশভাগ কিংবা একাত্তরের স্মৃতি। নববর্ষের দিনও তাঁদের চোখের জল বাঁধ মানছে না। নিন্দায় সরব বিশিষ্টজনেরা: ক্যালেন্ডারে নতুন একটা বছর। হালখাতা, লক্ষ্মীপুজো, মিষ্টিমুখে বর্ষবরণ৷তবে, লাগাতার অশান্তিতে বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদের মানুষগুলোকে স্পর্শ করল না সেই উৎসব, আনন্দ। নিজের বাড়ি-ঘর থাকতেও, তা ছেড়ে অন্য় রাজ্য়ে পালিয়ে শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে। বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটায় ওদের প্রাপ্তি বলতে--- শুধুই ভয়, যন্ত্রণা আর চোখের জল। বছরের প্রথম দিনে, এই মানুষগুলোর অসহায়তার জন্য় দায়ী কারা? সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, "বিস্মিত। নিন্দা। প্রশাসন, পুলিশের ব্যর্থতা। গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতা। পয়লা বৈশাখে শুভ বৃুদ্ধির উদয় হোক। বাংলা তো সাম্প্রদায়িক হিংসা দেখতে অভ্যস্ত নয়।'' শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার বলেন, "যারা ঘটনা ঘটিয়েছে পয়লা বৈশাখ তো তাদের নয়। যারা ঘরহারা তাদের পয়লা বৈশাখ। কেন্দ্র ক্ষমতা দখলের জন্য সাপোর্ট করছে। বিরত থাকুন। রাজ্য সরকার ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবে এসব করবেন না। সাধারণের কথা ভাবুন।'' কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে? কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন ভিটেহারা মানুষগুলো? শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি পুলিশও। ইটবৃষ্টি, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর বাইক ভেঙে অগ্নিসংযোগ...বাদ যায়নি কিছুই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ দূরে থাক, মুর্শিদাবাদে তো পুলিশকেই পালিয়ে দোকানের শাটার নামিয়ে লুকোতে দেখা গেছে। আইনের রক্ষকেরই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে যাবে? অভিনেতা বাদশা মৈত্রের কথায়, "আমিও মুর্শিদাবাদের ছেলে। এরকম ঘটনা ঘটছে রাজ্যের মধ্যে। প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না।''
মুর্শিদাবাদ থেকে ভাঙড়, ওয়াকফ আন্দোলন ঘিরে অশান্তি থামাতে পুলিশ ঠিক কতখানি সক্রিয় ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূলেরই একের পর এক বিধায়ক, সাংসদ। ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম, ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকত মোল্লা থেকে জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান। একসুর সবার।