উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: বালিগঞ্জ বিধানসভায় (Ballygunge) দুই নম্বরে উঠে এল বাম (Left)। এবিপি আনন্দের প্রতিনিধির মুখোমুখি হয়েছিলেন বাম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম (Saira Shah Halim)।


প্রশ্ন: বালিগঞ্জে চূড়ান্ত রেজাল্ট পাওয়ার পর ২০ হাজারের সামান্য কম ভোটে হারলেন তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র কাছে। কী প্রতিক্রিয়া?


সায়রা শাহ হালিম: আমাদের জনমসর্থন অনেক বেড়েছে। যেমন দেখলেন আমাদের ভোট শেয়ার অনেক বেড়েছে। মানুষের কাছে এমন বার্তা ছিল যে টিএমসির প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা কঠিন লড়াই করেছি। অনেক জায়গা থেকে সমর্থন পেয়েছি। সাধারণ মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছেন, বামপন্থী সকল পার্টির সমর্থন পেয়েছি, তাঁদের প্রত্যেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সাধারণ মানুষ আমাকে অনেক আশীর্বাদ দিয়েছেন। এই সমস্ত কিছু থেকে সাহস নিয়ে আমরা সামনের ভোট লড়ব। আর বামফ্রন্ট আরও বেশি ভোটে দুই নম্বর থেকে এক নম্বরে উঠে আসবে। 


প্রশ্ন: ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রায় ৭১ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এবার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় জিতলেন প্রায় ২০ হাজার ভোটে। অর্থাৎ টিএমসি ভোট কমেছে বেশ খানিকটা। আর ২০২১ সালের ভোটে আপনার স্বামীই ৯৮ হাজার ভোটে হারেন। এতটা ব্যবধানের কথা কখনও ভেবেছিলেন?


সায়রা: অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। ডা. ফুয়াদ হালিমও কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। আমি ও অন্যান্য কমরেডও এখানে অনেক খেটেছি। এখানে সুশীল সমাজের বড় ভূমিকা আছে। তাঁরা আমাকে প্রবল সহযোগিতা দিয়েছেন। এই সবের ফল তো আছেই। এছাড়া যদি আপনি মনে মনে স্থির করে নেন যে আপনি জিতবেনই, তাহলে কোনও ক্ষমতা আপনাকে আটকাতে পারবে না। সেখানে গোটা রাজ্যের সমস্ত এজেন্সিও যদি নেমে পড়ে ময়দানে, হেনস্থা করে যাই করুক না কেন, জনতার রায় আপনার সঙ্গে থাকলে কেউ আটকাতে পারবে না। তাই আমি মন থেকে সক্কলকে ধন্যবাদ দিতে চাই যারা আমার সঙ্গে থেকেছেন, সাপোর্ট করেছেন।


প্রশ্ন: একইদিনে দুটো ভোট হল। আসানসোল ও বালিগঞ্জ। এক জায়গায় লোকসভা উপনির্বাচন, অন্য জায়গায় বিধানসভা উপনির্বাচন। বালিগঞ্জে আপনারা এতটা উঠে এলেও আসানসোলে কিন্তু সিপিএম যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রইল। এর কী এমন কারণ মনে হচ্ছে?


সায়রা: এটা তো বেশ কঠিন প্রশ্ন হয়ে গেল। অনেক কারণের মধ্যে প্রার্থীর ব্যক্তি পরিচয় অন্যতম। এখানে আমি আমার কমরেডদের সঙ্গে অনেক পরিশ্রম করেছি। সিভিল সোসাইটিও সাহায্য করেছে। সেই কারণে আমি মনে করি বালিগঞ্জে বামের ভোট শেয়ার বহুমতে বেড়েছে।


প্রশ্ন: আপনি যখন ভোটে লড়ছেন তখন রাজ্যে একাধিক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা যা আপনার এলাকায় পড়ে, আনিস খান, বগটুই কাণ্ড! এই সমস্ত কি সাধারণ মানুষকে আপনার দিকে আসতে বাধ্য করেছে বলে মনে করেন? 


সায়রা: অনেক ঘটনা গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা দেখছি যে তৃণমূল হিংসার শাসন করে আর বিজেপি সাম্প্রদায়িক শাসন করে। ফলে একদিকে ভোটাররা চাইছেন না যে এখানে দুর্নীতি হোক বা সাম্প্রদায়িক শাসন হোক বা হিংসার ঝড় উঠুক। ফলে সেই দিক থেকে একটা প্রত্যাখ্যান এসেছে তৃণমূল ও বিজেপির প্রতি। এবং মানুষ বামকে ভোট দিয়েছেন। 


প্রশ্ন: বালিগঞ্জ তৃণমূলের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। এখানের খুব বড় একটা ভোটব্যাঙ্ক হচ্ছে সংখ্যা লঘু। এবার মনে করা হচ্ছে যার একটা অংশ আপনার দিকে ঝুঁকেছে। সেটা কেন বলে মনে হয়?


সায়রা: দেখুন এখানে তৃণমূলের প্রার্থী নিয়ে সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আমার মনে হয় তৃণমূলের উচিত ছিল অবিতর্কিত কোনও প্রার্থীকে ভোটে দাঁড় করানো। যে সকলের সঙ্গে থাকবে, সবার সমস্যার কথা ভাববে। আমাদের ক্ষেত্রে তাঁরা প্রার্থী দেখেছেন, আমাকে ভালবেসেছেন। যিনি সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলবেন, সাম্প্রদায়িকতার শাসন মানবেন না, তেমন প্রার্থীরই পাশে থেকেছেন সাধারণ মানুষ।


আরও পড়ুন: WB By-Election 2022: "জয়ের মুকুট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথাতেই থাকবে'' প্রতিক্রিয়া শত্রুঘ্নর


প্রশ্ন: তাহলে কি আপনি বলছেন বাবুল সুপ্রিয়র বদলে তৃণমূল অন্য কাউকে প্রার্থী করলে আপনি সেই ৭০ হাজারেই হারতেন?


সায়রা: সেরকম আমি বলিনি। তবে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে এসব ক্ষেত্রে। প্রার্থীর ব্যক্তি পরিচয়ের সঙ্গেও আমি গর্বিত যে গোটা সিভিল সোসাইটি আমার সঙ্গ দিয়েছে। সমস্ত বাম পার্টির সঙ্গে তৃণমূলের অনেক সাপোর্টারও আমার সঙ্গে ছিলেন। একটা বাতাবরণও তৈরি হয়, তাতেও খানিকটা বোঝা যায়। 


প্রশ্ন: আমরা দেখছি ২০২১ সাল থেকে সমস্ত আসনেই সিপিএম নতুন মুখদের প্রার্থী করছে। যাঁদের মূলত মিটিং মিছিলে দেখা যায়। আপনি সেই অর্থে পতাকা ধরে মিছিলে হাঁটা প্রার্থী নন। তাহলে কি এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে যারা সিপিএমের সার্পোটার এবং প্রার্থী হচ্ছে তাদের সমর্থন করছে মানুষ?


সায়রা: হ্যাঁ, আমি বামফ্রন্ট সাপোর্টার। পার্টির সঙ্গে সরাসরি সেভাবে জড়িত নই। কিন্তু আমি চিরকালই বাম মনোভাবাপন্ন। চিরকাল বাম মতাদর্শে বিশ্বাস করেছি। এখানে আমি সুশীল সমাজের সঙ্গে আমি জড়িত, এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনেও আমি সামিল হয়েছি। দিল্লি থেকে কলকাতা থেকে সমস্ত সংবাদমাধ্যমেও আমি এর বিরুদ্ধে কথা বলেছি। হিজাব কাণ্ড, কৃষক আন্দোলনেও আমি অংশ নিয়েছি। আওয়াজ তুলেছি। ফলে এই সমস্তই আমার পক্ষে কাজ করেছে বলে মনে করি।


এক কথায় বালিগঞ্জের বাম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম মনে করছেন যে সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ফলেই মানুষ তাঁকে ভোট দিয়েছেন।