কলকাতা: সবে বাংলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন হাতে। বাংলার প্রতি ভালবাসা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গোড়াতেই। টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে 'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য' আবৃত্তি করেছিলেন। তার পর যদিও গঙ্গাপাড় দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। আবারও রবীন্দ্রনাথের লেখা আওড়াতে শোনা গেল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে (CV Ananda Bose)। তবে এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। (Kolkata News) তাঁকে পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও।


বাংলা থেকে হিংসা এবং দুর্নীতি তাড়াতে হবে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন রাজ্যপাল বোস। বিরোধীদের নিশানা করতে যেভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সেই সুরে গলা মিলিয়েছিলেন তিনি। তবে কাউকে নিশানা করেননি তিনি, বরং নির্বাচনী অশান্তির প্রসঙ্গ এবং দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন। 


এবারও সেই নিয়ে সরব হলেন তিনি। তবে তার সঙ্গে যুক্ত করলেন কবিগুরুর লেখা। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সামনে আবারও 'চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির' আওড়াতে শোনা যায়। তিনি বলেন, "গুরুদেব বলেছিলেন চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির। এখনকার বাংলা সেই বাংলা নয়। এখনও দেরি হয়নি। অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগে,মানুষ চান দুর্নীতি শেষ হোক।"


আরও পড়ুন: Rabindranath Tagore: 'সমুখে শান্তি পারাবার, ভাসাও তরণী হে কর্ণধার'


রাজ্যপাল বোস আরও বলেন, "দুর্নীতি এবং হিংসাকে শেষ করতে মানুষকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। এটাই শেষের শুরু, দুর্নীতির শেষের শুরু, হিংসার শেষের শুরু।" রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে তাঁর মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন। আর সেই নিয়ে রাজ্যপালকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর বক্তব্য, "বেশি হেঁট হতে বারণ করুন। চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে পড়ে যাবে।"


রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাজ্যপালের এই মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, "রাজ্যপালের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই। এমন কোনও পরিস্থিতি রাজ্যে তৈরি হয়নি।"


একেবারে গোড়ার দিকে রাজ্য এবং রাজ্যপালের মধ্যে যে সুসম্পর্ক দেখা গিয়েছিল, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই তাতে ছেদ পড়ে। উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়েও রাজ্যপাল অনধিকার হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ রাজ্যের তৃণমূল সরকার। এমনকি রাজভবন থেকে সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তির সময় জেলায় জেলায় পৌঁছে যাওয়া হোক বা সম্প্রতি দুর্নীতি সংক্রান্ত আপদকালীন বিভাগ খোলা, সবেতেই রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত বেধেছে রাজ্যপালের। যত দিন যাচ্ছে, তার তীব্রতা বাড়ছে, বই কমছে না।