সঞ্চয়ন মিত্র, মলয় চক্রবর্তী, সুনীত হালদার: রাজ্য সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা নিয়ে বঙ্গ বিজেপি-র রোষের মুখে পড়েছিলেন। আবার শিক্ষাক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে রাজ্যও। সেই আবহেই ইঙ্গিতপূর্ণ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। জানিয়ে দিলেন, আইনগত বা সাংবিধানিক সঙ্কটে শেক্সপিয়রের 'হ্যামলেট' হবেন না তিনি (Hamlet)। 


উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’-এর প্রসঙ্গ টেনে এমনই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য় করলেন রাজ্য়পাল বোস। জানিয়ে দিলেন, রাজ্যে আইনগত, সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হলে, তিনি চুপ করে বসে থাকবেন না। তাঁর বক্তব্য, "আইনগত, সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক, কোনও সঙ্কট তৈরি হলে রাজ্যপাল শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের মতো নিষ্ক্রিয় থাকবে না। টু বি অর নট টু বি, শিক্ষাই এটা শেখাবে।" (WB Governor)


সোমবার জোড়াসাঁকোয় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজ্যপাল বোস। সেখানে তিনি জানান, রাজ্যে আইনগত বা সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হলে রাজ্যপাল শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের মতো ‘টু বি অর নট টু বি’-র সংশয় নিয়ে বসে থাকবেন না। কারণ, শিক্ষা আমাদের এটাই শেখায়।


বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত নির্দেশিকা ঘিরে রাজ্য-রাজভবন সংঘাতের আবহ এখনও কাটেনি। সম্প্রতি রাজভবনের তরফে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আগে আচার্য তথা রাজ্যপালের অনুমোদন নিতে হবে। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আগে আচার্য তথা রাজ্যপালের থেকে নিতে হবে অনুমোদন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কাজ হচ্ছে, তা রিপোর্ট আকারে, প্রতি সপ্তাহের শেষ কাজের দিনে, ইমেল করে রাজভবনকে জানাতে হবে। উপাচার্যরা যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরাসরি আচার্যের সঙ্গে টেলিফোন অথবা ইমেল মারফত কথা বলতে পারবেন।


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: মামলায় অভিষেককে পক্ষ করার নির্দেশ, বিচারপতি বদল হলেও, অভিষেককে নিয়ে পাল্টাল না কোর্টের নির্দেশ


সেই নির্দেশ প্রত্য়াহারের দাবি তুলে রাজ্য়পালকে বেনজির আক্রমণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় আবার বলেন, "প্রত্যেকদিনই যদি বলেন এত দিনের মধ্যে রিপোর্ট চাই। উপাচার্যরা পরীক্ষা নেবেন, কাজ করবেন না ওঁকে খরচের হিসেব দেবেন? আমার মনে হয়, ওঁকে কেউ ভুল বোঝাচ্ছেন। আমরা আচার্যের বিল ওনাকে পাঠিয়েছে, সম্মতি জানাননি বা ফেরতও পাঠাননি। আমি বলব, বিলটি ফেরত পাঠান, তাহলে আমরা বিলটা আরেকবার বিধানসভায় দেখতে পারি।" প্রত্যেকেরই সীমা জানা উচিত, এমনও জানিয়ে দেন মমতা।


তার পরই 'হ্যামলেট'-এর প্রসঙ্গ টানলেন রাজ্যপাল বোস। এ নিয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "রাজ্য়পাল তো সংবিধানের কাস্টডিয়ান। যেন সংবিধান টিকে থাকে, সেটা দেখার দায়িত্ব কাজ।" সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "রাজ্য়পাল কে? সেন্ট্রাল গর্ভনমেন্টের এজেন্ট ছাড়া কিছুই না। হিস্ট্রি ডাস নট রিপিট ইটসেল্ফ। যদি রিপিট হয়, সেটা ফার্স।"

নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন না বোঝাতে গিয়েই যদিও 'হ্যামলেট'-এর প্রসঙ্গ টেনেছেন রাজ্যপাল বোস। তবে শেক্সপিয়র সৃষ্ট এই চরিত্রের ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, হিংসার উত্তর যে হিংসা হতে পারে না, তা হ্য়ামলেট তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছিল। ফ্রেডরিক নিশে তাঁর বিখ্য়াত বই 'বার্থ অফ ট্র্য়াজেডি'তে বলেছেন, 'হ্য়ামলেট' সম্পর্কে যা বলা হয়, যে 'হ্য়ামলেট' দ্বিধাগ্রস্থ হয়েছেন বারবার, তা কিন্তু নয়। বরং 'হ্য়ামলেট' বুঝেছিলেন যে, প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় খেলায় একবার ঢুকে গেলে তাঁর অন্ত নেই।