সৌভিক মজুমদার, আশাবুল হোসেন ও মলয় চক্রবর্তী: নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেছিলেন (Justice Abhijit Ganguly), "অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee) এবং কুন্তল ঘোষকে খুব দ্রুত CBI, ED-র জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।" এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক। তার প্রেক্ষিতেই নির্দিষ্ট দু'টি মামলার এজলাস বদলের নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু বিচারপতি বদলালেও, নির্দেশ বদলাল না (SSC Case)। 


বেঞ্চ বদলাল। বিচারপতি বদলাল। কিন্তু, অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের মামলায় বদলাল না নির্দেশ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, অভিষেক এবং কুন্তলকে খুব দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত CBI, ED-র। এজলাস বদলের পর, বিচারপতি অমৃতা সিন্হা নির্দেশ দিলেন, নিয়োগ দুর্নীতি সেই মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পার্টি করার।

এই ঘটনার সূত্রপাত মাস দেড়েক আগে। ২৯ মার্চ শহিদ মিনার চত্বরের সভা থেকে অভিষেক দাবি করেন যে, সারদাকাণ্ডে ধৃতদের দিয়ে তাঁর নাম বলানোর চেষ্টা হয়েছিল। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, "যবে থেকে সারদা হয়েছিল, আক্রমণ ছিল আমার দিকে। মদন মিত্র বসে আছে, কুণাল ঘোষ দীর্ঘদিন কাস্টাডিতে ছিল, কী বলেছেন জানেন এদেরকে? অভিষেকের নাম নাও, ছেড়ে দেব। কি বলেছিল না?"

এর পরই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত, কুন্তল ঘোষের গলাতেও শোনা যায় একই সুর। কারও নাম বলার জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে, জানান, অভিষেকের নাম বলানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। সেই মর্মে নিম্ন আদালত এবং হেস্টিংস থানায় অভিযোগ করেন বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা।


আরও পড়ুন: Samaresh Majumdar Profile: 'দৌড়' থামল! সমরেশ-প্রয়াণে সাহিত্যের আকাশে খসে পড়ল 'কালপুরুষ'


এর পরই ১৩ এপ্রিল আদালতে অভিষেকের প্রসঙ্গ টানেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। তিনি জানান, অভিষেক এবং কুন্তলকে খুব দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত CBI, ED-র। অভিষেকের বক্তব্যও তদন্তের বাইরে থাকা উচিত নয়। ২৯ মার্চ অভিষেক একটি সভায় যে দাবি করেছিলেন, তার সঙ্গে কুন্তলের বয়ানের সাযুজ্য আছে। কুন্তল সেখান অভিষেকের থেকেই বয়ান লেখার সবূত্র পেয়েছিলেন কিনা, তার তদন্ত হওয়া উচিত বলে যুক্তি দেন।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন অভিষেক। তার প্রেক্ষিতে, মামলার এজলাস বদলের নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এজলাস থেকে মামলা সরে যাওয়ার পরও এ নিয়ে মুখ খোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। কুন্তল সংক্রান্ত মামলায়, অভিষেকের নাম তিনি কেন উল্লেখ করেছিলেন, তা-ও বলেন বিচারপতি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "সেই মামলায় অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের নাম আসবে কেন? সে তো কুন্তল নিজে তুলেছে। সে তো কুন্তল ঘোষ নিজে তুলেছে। আমার যতদূর মনে পড়ে, যে ডকুমেন্ট আমার কাছে প্লেসড হয়েছিল, সেখানে কুন্তল ঘোষের নিজের তোলা নামটা। এটা তো আমার বানানো, বা কোথাও থেকে, আকাশ থেকে পেড়ে আনা তো কোনও নাম নয়। অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলে কি কারও অস্তিত্ব নেই পৃথিবীতে? আমি জানি না। কী বলতে চাইছেন আপনারা।"

এর পর সেই মামলা যায় বিচারপতি অমৃতা সিন্হার বেঞ্চে। সোমবার তিনিও অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রশ্ন করলেন, "তদন্তে সহযোগিতা করলে আপনার সমস্যা কোথায়?"