কলকাতা: জাতীয় সড়কের ধারে রুদ্ধশ্বাস শ্যুটআউট। তা নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। সেই আবহেই এ বার বিস্ফোরক অভিযোগ রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo)। শ্যুটআউটে নিহত কয়লা মাফিয়া (Coal Mafia) রাজু ঝায়ের (Raju Jha) বিজেপি সংযোগ তুলে ধরলেন বাবুল। তাঁর দাবি, রাজুর হোটেলে উঠতেন বিজেপি-র তাবড় নেতারা। কয়লা মাফিয়াচক্র নিয়ে কেন্দ্রকে অনেক তথ্যও দিয়েছিলেন। কিন্তু যাঁদের বিরুদ্ধে তথ্য দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন বিজেপি-তে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন বাবুল।
কয়লা মাফিয়া রাজুকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা
শনিবার সন্ধেয় শক্তিগড়ে জাতীয় সড়কের ধারে, ল্যাংচার দোকানের সামনে ভয়াবহ শ্যুটআউট ঘটে। কয়লা মাফিয়া রাজুকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। সেই রাজুকে নিয়েই সরব হলেন বাবুল। ট্যুইটারে লেখেন, 'যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। আইন ভাঙলে আদালতে বিচার হওয়া উচিত। এটা লিখছি কারণ এই রাজু ঝা-কে নিয়েই আজ বিজেপি-র যাঁরা বড় বড় কথা বলছেন, তাঁদের সঙ্গে চূড়ান্ত মতবিরোধ হয় আমার। ঘটা করে রাজুকে বিজেপি-তে যোগদান করিয়েছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। আজ এঁরা বলবেন, 'চিনি না'!'
বাবুল আরও লেখেন, 'রাজুর হোটেল বিজেপি-র বড় বড় নেতারা ব্যবহার করতেন। আর আমাকে বদনাম করতে দুর্গাপুরের রোড শো-তে সব ব্যানারের নিচে 'সৌজন্যে রাজু ঝা' লেখানো হয়েছিল। প্রশ্ন এটাই যে, বিজেপি নেতাদের উপর কেন CBI-ED তল্লাশি হবে না'! বিজেপি-কে ওয়াশিং মেশিন বলেও উল্লেখ করেন বাবুল।
বাবুলের দাবি, লক্ষ্মণ নামের এক 'দুষ্টু' বিধায়ক আসানসোলের সভাপতি হওয়ার জন্য সকাল থেকে তাঁর বাড়িতে বসে থাকতেন। সেই লক্ষ্মণ ছিলেন কৈলাসের আশীর্বাদধন্য। বিজেপি এবং দিলীপ ঘোষের সঙ্গে রাজুর বিষয়টিতে মধ্যস্থতা করেন বলে দাবি বাবুলের।
কয়লা মাফিয়া রাজু ঝার বিজেপি সংযোগ নিয়ে ট্যুইট মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র। পর্যটনমন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয় ট্যুইটে চাঞ্চল্যকর দাবি করে লিখেছেন, 'রাজুরই হোটেলে বিজেপির বড় বড় নেতারা ব্যবহার করতেন। আর আমাকে বদনাম করার জন্য দুর্গাপুরের একটা রোড শো-তে আমার সব ব্যানারের নীচে সৌজন্যে রাজু ঝা, লেখানো হয়েছিল। প্রশ্ন এটাই যে এই বিজেপি নেতাদের ওপর সিবিআই-ইডির রেড কেন হবে না?'
আরও পড়ুন: Udayan Guha: 'নেতার ছেলেকে ডাক্তারিতে সুযোগ পাইয়ে দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু'! আরও বিস্ফোরক অভিযোগ উদয়নের
২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজু। দিলীপ ঘোষের হাত থেকে বিজেপি-র পতাকা নেন রাজেশ ওরফে রাজু।
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র হয়ে প্রচারেও দেখা যায় রাজুকে। যদিও গত দু'বছর ধরে রাজনৈতিক ভাবে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে সূত্রের খবর। শোনা যাচ্ছে, সম্প্রতি কয়লা কারবারে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেন রাজু।
সূত্রের খবর, কয়লা পাচারকাণ্ডে ইডি-সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ায় লালা ওরফে অনুপ মাঝির গোষ্ঠী কয়লা কারবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। বর্তমানে ইসিএল-এর কয়লার টেন্ডারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন রাজু। এর ফলে অন্য গোষ্ঠী কাজ করতে পারছিল না। সেই কারণেই কি রাজুকে টার্গেট করা হয়েছে? উঠছে প্রশ্ন।
এর আগে, ২৬ ফেব্রুয়ারি দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের অম্বুজা কলোনিতে বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার দফতরের দরজার সামনে গুলি চলে। সেই অফিসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল কয়লা মাফিয়া রাজুর। গুলির চলার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজু। সেই ঘটনার সঙ্গে কি যোগ রয়েছে গতকালের ঘটনার? এর আগেও টার্গেট করা হয়েছিল তাঁকে? খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
গরুপাচারকাণ্ডের অভিযুক্তের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল রাজুর!
অন্য দিকে সূত্রের খবর, ইলামবাজারের গরুর হাটের মালিক এবং গরু পাচারকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত শেখ আবদুল লতিফ বীরভূমের কয়লা কারবার দেখতেন। সেই সূত্রে লতিফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল রাজুর। তাঁর কাছ থেকে সাহায্য নিত রাজু।