কলকাতা  :  নেতৃত্বের কড়া বার্তার পরেই ৭ জেলায় পুরসভা ভোটে (WB Municipal Election 2022) দলের বিক্ষুব্ধ  ৪৪ জন  ‘নির্দল’ প্রার্থীকে (Rebel Independent Candidates)  বহিষ্কার  করল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। পুরুলিয়া, বীরভূম, নদিয়া, কোচবিহার, পূর্ব মেদিনীপুরে ২৭ জন বহিষ্কৃত। ঝাড়গ্রামেও তৃণমূল ছেড়ে নির্দল প্রার্থী হওয়ায় ২জন বহিষ্কৃত। কৃষ্ণনগর পুরসভার ১১জন নির্দল প্রার্থীকে বহিষ্কার করল তৃণমূল। দুবরাজপুরের ৩টি ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থীদের বহিষ্কার করল তৃণমূল। 


পুরুলিয়া, ঝালদা পুরসভার ৮ বিক্ষুব্ধকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে ৪ জন নির্দল প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকেও ১জন বিক্ষুব্ধকে বহিষ্কার করল তৃণমূল।  গতকালই মেদিনীপুর, খড়গপুরে ১৫ জন বিক্ষুব্ধকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে।  তৃণমূল কর্মী হয়েও নির্দল হয়ে ভোটের লড়াইয়ে দাঁড়ানোয় বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  উত্তর ২৪ পরগনায় পিছু হঠার পথে ২৮ জন বিক্ষুব্ধ, এমনই দাবি নেতৃত্বের।


রাজ্য  শতাধিক পুরসভায় ভোটের মুখে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কড়া নির্দেশিকা পৌঁছচ্ছে জেলায় জেলায়। নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে যে, দুদিনের মধ্যে প্রার্থীপদ ছাড়তে হবে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দলদের। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে নামতে হবে ভোটের ময়দানে। নির্দেশ অমান্য করে ভোটে লড়লে নির্দলদের তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হবে। আর দলে ফেরানো হবে না। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘প্রয়োজনে লিফলেট বিলি করে নির্দলকে জানাতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না।’


শতাধিক পুরসভায় ভোটের মুখে দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কড়া  অবস্থান নিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  ‘নির্দেশ অমান্য করলে দলবিরোধী কাজে দোষী সাব্যস্ত করে বহিষ্কার করা হবে বিক্ষুব্ধ নির্দলদের। বহিষ্কৃতদের আর কোনও দিন দলে ফেরানো হবে না।’ এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছে তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি।


শাসক শিবির সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় পৌঁছে গিয়েছে সেই নির্দেশ।  বারাসতের সাংসদ তথা রাজ্য মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেছেন, যাঁরা নির্দলে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরে দাঁড়াতে হবে। লিফলেট দিয়ে জানাতে হবে আমি লড়াই করছি না।


২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার ভোট। গত চৌঠা ফেব্রুয়ারি তার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে তৃণমূল। তারপরই জেলায় জেলায় শাসক শিবিরে বেনজির বিক্ষোভ শুরু হয়।টিকিট না পাওয়া অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মী নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে পড়েন। নেতৃত্বের অনুরোধ, উপরোধের পরেও বহু বিক্ষুব্ধ নির্দল মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টে দলীয় প্রার্থীকে হারাতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। 


তৃণমূল সূত্রে খবর, শনিবার কালীঘাটের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। কোনও রকম বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। এই আবহে বুধবার পুরাতন মালদায় ভোট প্রচারে গিয়ে নির্দলদের হুঁশিয়ারি দেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন,  দলের সঙ্গে যুক্ত কেউ নির্দল বা গোঁজ হয়ে দাঁড়াতে পারবেন না...এর অন্যথা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে দল।


দলীয় শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনও আপোস নয় জানিয়ে এভাবে কড়া পদক্ষেপ করল তৃণমূল। কলকাতা পুরভোটে টিকিট না পেয়ে, নির্দল হিসেবে লড়েছিলেন তৃণমূলের সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তনিমা চট্টোপাধ্যায়। দু’জনকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। নব নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রথম বৈঠকে নির্দল ইস্যুতে কড়া অবস্থান স্পষ্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, কেউ যদি মনে করে কাউকে অন্তর্ঘাত করে জিতিয়ে দিয়ে পরে আবার ঢুকে যাব, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। গেম ইজ নট ইজি।


তৃণমূল সূত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনার ২৫টি পুরসভায় শাসকদলের ৫৭ জন বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থী হন। সূত্রের খবর, দল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ জারি হতেই, তাঁদের মধ্যে ২৮ জন নির্দল লড়াই থেকে সরে আসতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।নতুন নির্দেশিকায় ঘাসফুল থেকে কাঁটা কীভাবে সরে সেটাই দেখার।