মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: খালি হল ফের আরও এক মায়ের কোল। কখনও হাসপাতালে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় মৃত্যু। কখনও চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যু। এমন ঘটনা বারবার ফিরে আসে বাংলার বুকে। এবার ভুল ইনজেকশন দিয়ে শিশু মৃত্যু অভিযোগে তুলকালাম অন্ডালে।
শিশু মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে উত্তাল অন্ডালের উখড়া। ভুল ইনজেকশন দিয়ে শিশুটিকে মেরে ফেলার অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে যায় অন্ডাল থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশের সঙ্গে মৃতের পরিবারের ধাক্কাধাক্কি বাধে। আহত হন অন্ডাল থানার ওসি। সম্প্রতি ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃ্ত্যুর অভিযোগে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছিল সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। মৃতের আত্মীয়দের মারমুখী মেজাজে শেষ অবধি হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছিলেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা।
বছর দশেক আগেও, কলকাতায় এসে এমনই এক ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছিল ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। কলকাতায় এসে ভুল চিকিৎসার শিকার বিহারের এক তরুণ, ২০ বছরের রাজেন শর্মা। বিহারের মুজফ্ফরপুরের বাসিন্দা এই তরুণ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। পড়ে গিয়ে ভেঙে গিয়েছিল বাঁ হাতের কনুই। অভিযোগ, কলকাতায় এসে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছিলেন রাজেন। ৫ মাসে তিনবার অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তবু ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে যাচ্ছিল তাঁর বাঁ হাত। শুকিয়ে যাচ্ছিল আঙুল। চতুর্থবার অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। পোস্তা থানায় দায়ের হয়েছে অভিযোগ।
একইরকমভাবে ২০০৩ সালে তরুণ ক্রিকেটার রজনীশ পটেলের ক্ষেত্রেও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছিল। ৫ বার অস্ত্রোপচারের পর মারা গিয়েছিলেন রজনীশ। বিহারের বাসিন্দা রাজেনের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীর হয়ে দেশরক্ষার লড়াইয়ে নামার। কিন্তু আপাতত সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন বছর কুড়ির তরুণ।২০১৫ সালে তিনি সিআরপিএফে লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন। শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষার জন্য গ্রামের মাঠে অনুশীলন করছিলেন রাজেন। ২০১৬-র জানুয়ারিতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে বাঁ হাতের কনুই ভেঙে যায় তরুণের। সেই থেকে শুরু স্বপ্নভঙ্গের পালা। ভাল চিকিৎসার জন্য চলে আসেন কলকাতায়। এক আত্মীয়ের সূত্র ধরে ভর্তি হন কলকাতার মাড়োয়ারি রিলিফ সোসাইটি হাসপাতালে।
আরও পড়ুন, পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডে সর্ষের মধ্যেই ছিল ভূত ! গ্রেফতার পুলিশের প্রাক্তন SI
প্রথম ২ বার মারোয়াড়ি রিলিফ সোসাইটি হাসপাতালে, তৃতীয়বার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন হয়। এমআরআই রিপোর্টে দেখা যায়, প্রথমবার অস্ত্রোপচারের সময় রাজেনের হাতের একটি শিরা কেটে ফেলেন চিকিৎসক। সে কারণেই বাঁ হাতটি অকেজো হতে শুরু করেছে। চতুর্থবার অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।