দীপক ঘোষ ও বিটন চক্রবর্তী, কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনের পর চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও বাংলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। বুধবার ভবিষ্য়ৎ পরিকল্পনা ঠিক করতে মেগা বৈঠকে বসছে দল। কিন্তু তার আগে রাজ্য বিজেপি-তে বিরুদ্ধস্বর। রাজ্য় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন, রাহুল সিন্হা, তথাগত রায়, সায়ন্তন বসুর মতো নেতারা। (West Bengal BJP)


লোকসভা নির্বাচনের আগে বিস্তর হাঁকডাক চললেও বাংলায় ভরাডুবি হয়েছে বিজেপি-র। চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও দলের স্কোর শূন্য়।
পর পর এই  হারের ধাক্কা সামলাতে বুধবার মেগা বৈঠকে বসছে রাজ্য় বিজেপি। যেখানে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও। আর তার ঠিক আগেই দলের অন্দরের ক্ষোভ বাইরে চলে আসছে। বিজেপি নেতারাই রাজ্য নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রস্ন তুলছেন। (BJP Elections Setbacks)


পর পর হার নিয়ে বিজেপি নেতা রাহুল বলেন, "দল মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের ভাল কাজগুলি পৌঁছে দেওয়া যায়নি মানুষের কাছে। তৃণমূল কিন্তু নিজেদের ভাল কাজগুলি মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতে পেরেছে। বিজেপি তৃণমূলের নেতিবাচক দিকগুলি মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারেনি।" রাহুলের মতে, দলের ভাল না হওয়ার অন্যতম কারণ অহঙ্কার।


আরও পড়ুন: Sukanta Majumdar: 'ED-CBI দিয়ে গ্রেফতার করালেই হবে না, জেতার জন্য চাই সংগঠন', দলকে বার্তা সুকান্তর


২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হারের পর কামিনী-কাঞ্চনের চাঞ্চল্য়কর অভিযোগ তুলেছিলেন প্রাক্তন রাজ্য় সভাপতি তথাগত রায়। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের ফল নিয়েও, কার্যত একই সুর তাঁর গলায়। তাঁর বক্তব্য, "ভুল প্রার্থী নির্বাচন। ঘুষ খেয়ে দলের বিরুদ্ধে কাজ করা...কার্তিক মহারাজ নিজে আমাকে বলেছেন, এখানে দল যখন বুঝতে পারে জিততে পারব না, টাকা পয়সা সব সরিয়ে নিয়েছে। সেই সঙ্গে দল কিছুটা হলেও কাঞ্চন কামিনী থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি।"


গোঘাটের বিজেপি বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক বলেন, "আরামবাগ লোকসভা নির্বাচনের সময় ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। ট্যাবুলেসন সিট দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়। তাহলে আমাদের লোকেরা কী করছিল? পরিষ্কার কথা, দলের লোকগুলো টাকা-পয়সা খেয়ে এসব করেছে।" নির্বাচনের সময় একটি বারের জন্য তাঁকে ডাকা হয়নি বলে জানিয়েছেন সায়ন্তন বসুও। বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য রাজকমল পাঠকের মতে, আনকোরা লোকেদের হাতে দায়িত্ব দেওয়াতেই এই অবস্থা।


একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ জমা হয়েছে বিজেপি-তে, একরকম স্পষ্টই। সেই নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, "ওরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ। কে কার বিচার করবে? বিজেপি ভঙ্গুর, দীর্ণ, গ্রহণযোগ্যতা নেই নেতৃত্বের, নেই বিস্বাসযোগ্যতা। বিজেপি নেতৃত্বের উপাদান হচ্ছে চচ্চড়ি রাঁধার মতো। আর চচ্চড়ির উপাদান দিয়ে কখনও বিরিয়ানি রাঁধা যায় না। এই গোষ্ঠী বলবে, ওরা ডুবিয়েছে। ওই গোষ্ঠী বলবে, এরা ডুবিয়েছে।"


এই আবহেই বুধবার বৈঠকে বসছে রাজ্য বিজেপি। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে। কিন্তু তৃণমূলের মোকাবিলায় কি প্রস্তুত হতে পারবে তারা? সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।