কলকাতা: বিধানসভায় ২০০ আসনের লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। লোকসভায় আবার ৩৫ আসনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন হোক বা লোকসভা নির্বাচন, কোনওটিতেই সাফল্য পায়নি বিজেপি। পঞ্চায়েত এবং পুরসভা নির্বাচনেও সুবিধাজনক জায়গায় নেই তারা। সেই আবহে বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করল দলের অন্দরেই। সক্রিয় সদস্যর সংখ্যা যে জায়গায়, তাতে রাজ্য নেতৃত্বের নীতিকেই দায়ী করছেন একাংশ। 


বুথ থেকে রাজ্যে কমিটি গড়তে হলে অন্তত দু-লক্ষ 'সক্রিয় সদস্য' প্রয়োজন বিজেপি-র। কিন্তু বাস্তবে এর ২০ শতাংশও পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর। এর ফলে শনিবার সক্রিয় সদস্য সংগ্রহের কর্মসূচি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, লক্ষ্যমাত্র পূরণে আরও এক সপ্তাহ বাড়তি সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। আর সেই নিয়ে বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অসন্তোষ উগরে দিয়েছেন দলেরই একাংশ। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।


রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি রাজকমল পাঠক বলেন, "আমাদের কোনও ডাক নেই। কাউকে ডাকবে না, দলটা এগোবে কী করে? সম্ভব নয়। শুনলাম, মাত্র ৪০ হাজার সক্রিয় সদস্য। অথচ বুথের সংখ্যা ৮০ হাজার। তাহলে তো বুথে লোকই দিতে পারব না! ফাইভ স্টার হোটেলে বসে মিটিং করে, ১৫০০ টাকার প্লেট খাইয়ে হবে না। দলটা কোনও কর্পোরেট অফিস নয়।"


রাজ্য বিজেপি-র আর এক প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়ও রাজ্য নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। সুকান্ত মজুমদার নয়, সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি করার দাবি তুলেছেন তিনি। তথাগতর বক্তব্য, "পূর্ণ সময়ের সভাপতি না থাকলে দল এগোবে কী করে? কাজ চালানোর দায়িত্ব কে নেবে? দলকে চালাবে কে? পার্ট টাইম সভাপতি দিয়ে দল চালানোর চেষ্টা করলে, যা হওয়ার হবে। আগাগোড়া বলে আসছি। রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি হওয়ার জন্য একমাত্র যোগ্য লোক শুভেন্দু অধিকারী। ২০২৬ নিয়ে ততটা উৎসাহই নেই, যতটা ২০২১ নিয়ে ছিল।"


এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে যারপরনাই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এ রাজ্যে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "সক্রিয় সদস্যতা দলের গঠনতন্ত্রের বিষয়। ঠিক সময়ে বাংলার মানুষ বুথে বিজেপি-কে দেখতে পাবে। তৃণমূল ক্ষমতা থেকে চলে যাচ্ছে। তৃণমূলকে বিজেপি-ই বিসর্জন দেবে, বিজেপি-র বুথকর্মী এবং সক্রিয় সদস্যরাই দেবেন।"


২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে কলকাতায় সম্প্রতি সদস্য সংগ্রহ অভিযানের সূচনা করে বিজেপি।  এক মাসে ১ কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন অমিত শাহ। সেই লক্ষ্যপূরণে কখনও পুরস্কারের টোপ দেওয়া হয়, কখনও আবার রাস্তায় পথচারীদের সদস্যতা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়। ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে শুরু হয় সক্রিয় সদস্য সংগ্রহের অভিযান। কিন্তু দলীয় সূত্রের খবর, এত কিছুর পরও কাঙ্খিত লক্ষ্যের ধারেকাছে পৌঁছনো যাচ্ছে না। দলের নিয়ম অনুযায়ী ৫০ জন করে সাধারণ সদস্য সংগ্রহ করতে পারলে তাঁকে 'সক্রিয় সদস্য' হিসেবে গণ্য করা হয়। রাজ্যে এই মুহূর্তে ৭৯ হাজার বুথ রয়েছে। সূত্রের খবর, 'সক্রিয় সদস্য' হয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার, অর্থাৎ মোট বুথ সংখ্যার অর্ধেক। বোঝাই যাচ্ছে, রাজ্যের সব বুথে একজন করেও সক্রিয় সদস্য তৈরি করতে পারেনি বিজেপি, যা নিয়ে দলের অন্দরেই তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।