সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: ওএমআর শিট দুর্নীতি (OMR Sheet Scam) মামলায় হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশের পর প্রশ্নের মুখে পড়ল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (West Bengal Board Of Primary Education)। 'আসল ওএমআর শিটের প্রতিলিপি না থাকলে টেট পরীক্ষার্থীদের নম্বর বিকৃত করা হয়নি, সেটা বুঝবেন কী করে? যে ডিজিটাইজড তথ্যের কথা বলছেন, সেটা তো এডিট করা সম্ভব। আসল ওএমআর শিট না থাকাতেই সমস্যার সূত্রপাত', মন্তব্য করলেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হা (Justice Amrita Sinha)। সঙ্গে বললেন, 'কে টেট পাস করেছে, কে করেনি, কার নম্বর বাড়ানো হয়েছে, ইডির রিপোর্টে স্পষ্ট নয়।' আদালতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পাল্টা সওয়াল, 'শুধুমাত্র সন্দেহজনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।'


আগে যা ঘটেছে...
সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার... পর পর ৩ দিন। প্রাথমিকের OMR শিট সংক্রান্ত মামলায় আবারও CBI-কে তুলোধনা করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিচারপতি বলেন, 'CBI অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। এবার আমি আপনাদের পদক্ষেপ বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব। আপনারা দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকা দফতরের আধিকারিকরা কী করছেন, সেটা তাঁকে জানানো দরকার। CBI-এর আধিকারিকরা এত অবোধ বা নির্বোধ নন। নিশ্চিতভাবেই CBI-এর আধিকারিকরা দুষ্কৃতীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।' OMR শিট মামলায়, মঙ্গলবারই নিয়োগ দুর্নীতিতে গঠিত SIT-এর প্রধান অশ্বিন শেনভিকে তলব করে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেন, 'CBI আধিকারিকদের নির্বোধের মতো আচরণে আমি বিস্মিত। এতবার এত আদালত থেকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে CBI-কে, তাও হুঁশ ফিরছে না?' বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন,' এক সময় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ মানিক ভট্টাচার্যর জমিদারি ছিল।' দীর্ঘ সওয়াল জবাবের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব এবং CBI-এর ডিরেক্টরের নাম জানতে চান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। উত্তরে CBI-এর আইনজীবী বলেছিলেন,প্রমোদকুমার মিশ্র এবং প্রবীণ সুদ। CBI এখন প্রধানমন্ত্রীর অধীনস্থ নাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের? তা জানতে চান বিচারপতি। উত্তরে আইনজীবী সুদীপ্ত দাসগুপ্ত বলেন, PMO-র অধীনস্থ। এরপর, বিচারপতি বলেন, 'CBI-তে একগুচ্ছ বোকা লোক কাজ করে এটা বিশ্বাস করতে আমি প্রস্তুত নই। এটা ইচ্ছাকৃত।' তখন মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলে এই দুর্নীতিকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা হবে এবং তদন্ত ব্যাহত হবে।অনাহুত ব্যক্তিদের আগমন হবে। আমলাদের হস্তক্ষেপ শুরু হবে। দয়া করে এই পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকুন।' তখন বিচারপতি বলেন, 'ঠিক আছে। তাহলে আমি CBI-এর অধিকর্তাকে জানাচ্ছি যে তাঁর অধীনস্থ আধিকারিকরা কী করেছেন। আমি একেবারেই খুশি নই। তিন-চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নই আপনারা করেননি। CBI এক বছর আগেই এই চক্র ভাঙতে পারত। যদি CBI আধিকারিকরা এই প্রশ্ন নাই করেন, তাহলে তাঁকেই গ্রেফতার করা উচিত। CBI-এর কিছু আধিকারিক অসৎ বা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাজ করেছেন।' 
আজ ওএমআর শিট দুর্নীতি মামলাতেই হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়ল পর্ষদ। 


আরও পড়ুন:নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিনেতা-যোগ, ৪৪ লক্ষের লেনদেন, আদালতে জানাল ED