কলকাতা: উপনির্বাচনে সাধারণত শাসক-বিরোধী সমীকরণে তেমন রদবদল ঘটে না যদিও। কিন্তু আর জি কর কাণ্ডের জেরে উত্তাল পরিস্থিতির জেরে এবারের ফলাফলে প্রভাব পড়বে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু শনিবার ফল প্রকাশিত হতে দেখা গেল, ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের সবক'টিতেই জয়ী হল তৃণমূল। এমনকি যে মাদারিহাট এতদিন বিজেপি-র দখলে ছিল, তা-ও ছিনিয়ে নিল জোড়াফুল শিবির। দলের নেতা-কর্মীরা এই জয়ের কৃতিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিয়েছেন। যদিও বিজেপি এই ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। বরং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরাই জিতবেন বলে দাবি করেছেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। (West Bengal By Elections Result 2024)


শনিবার নৈহাটি, সিতাই, হাড়োয়া, মাদারিহাট, মেদিনীপুর এবং তালডাংরা, এই ছয় আসনে উপনির্বাচনের ফলঘোষণা হয়। আর সেই ফলাফল সামনে আসতেই দেখা যায়, উপনির্বাচনের ফলাফল ৬-০ হয়েছে। বিপুল ভোটে  জয়ী হয়েছে জোড়াফুল শিবির। বেশ কিছু জায়গায় ফলাফল ২০২১-এর তুলনায়ও ভাল। কোথাও দাঁত ফোটাতে পারেনি বিরোধী দলগুলি। একদিকে মাদারিহাট যেমন হাতছাড়া হয়েছি বিজেপি-র, তেমনই আলাদা আলাদা লড়াই করেও ভোটবাক্সে সুফল তুলতে পারেনি সিপিএম এবং কংগ্রেস। আর এই ফলাফল সামনে আসার পরই ফের রাজ্যে বিরোধীদের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। (WB By Polls Result 2024)


যদিও সুকান্ত উপনির্বাচনের পরাজয়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ। বরং ভরাডুবির পর সাফাই দিতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। সুকান্তর বক্তব্য, "উপনির্বাচনে এরকমই ফল হয়। ২০২৬ সালে রাজ্যে বিজেপি-ই সরকার গঠন করবে। উপনির্বাচন এবং সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে ফারাক থাকে।" বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, "একচেটিয়া ভোট করায় তৃণমূল। আমরা যেটা জানতাম সেটাই হয়েছে। আমি তো কমপক্ষে জানতামই, প্রচারে গিয়ে বুঝেছি, পরিস্থিতি দেখেছি। জেতার কোনও সুযোগ ছিল না।" তালডাংরা, মাদারিহাটে লড়াই হবে ভেবেছিলেন, কিন্তু তা-ও হল না বলে আক্ষেপও করেছেন দিলীপ। 



নৈহাটির বিধায়ক থাকা পার্থ ভৌমিক এই জয়কে প্রত্য়াশিত জয় বলছেন। কিন্তু ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ, বিজেপি-র অর্জুন সিংহ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। অর্জুনের বক্তব্য, "নির্বাচন কমিশন যে SOP তৈরি করেছে, সেটাই ভুল। যেখানেপ্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট একই বিধানসভার। এই SOP না পাল্টালে কিছু ঠিক হবে না। পশ্চিমবঙ্গে ছ'বছর ধরে নির্বাচন কমিশনে বসে আছে, ওকে সরাচ্ছে না। ওয়েবকাস্টিংয়ের নামে প্রহসন হচ্ছে।"


যদিও রাজ্য বিজেপি-র নেতা অনুপম হাজরা দলকেই কটাক্ষ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'মোটামুটি নিশ্চিত বঙ্গ-বিজেপি তাদের ধারাবাহিকতা* বজায় রাখতে পারবে, *হারের'।


এবারে একাধিক জায়গায় জয়ের ব্যবধান ২০২১ সালের নির্বাচনের থেকেও বাড়িয়েছে তৃণমূল। এব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র জানিয়েছেন,  তৃণমূল ৬-০য় জিতবে বলে আগে থেকেই আঁচ করা গিয়েছিল। হাড়োয়া বনাম সিতাই, কে কাকে টেক্কা দেবে, এটাই আলোচনার বিষয় ছিল। এদিন জয়ের পর সরাসরি নাম না করলেও, তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেই দলকে বদনাম করার চেষ্টা হয়েছে, তার পরও দল সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে শুভময় প্রশ্ন তুলেছেন। জনমুখী প্রকল্পের কথা না বলে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।