সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ফের বেসরকারি হাসপাতালের (Private Hospital) বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত বিলের (Over charge) অভিযোগ। রোগীর পরিবারকে টাকা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি জরিমানাও (Fine) করল স্বাস্থ্য কমিশন (West Bengal Clinical Establishment Regulatory Commission)।
করোনা (COVID-19) আক্রান্ত হওয়ায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা ডালিয়া গোস্বামী। সেখানে ২৯ দিনে চিকিৎসার খরচ বাবদ বিল ধরানো হয় ২৯ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকার। এর মধ্যে শুধু ওষুধের বিলই ১০ লক্ষ টাকার। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ নেওয়া হয়েছে সাড়ে চার লক্ষ টাকা। চিকিৎসা সরঞ্জামের বিল ধরা হয়েছে দু’লক্ষ টাকা। স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশিকা না মেনে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ নিয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হন ওই রোগীর পরিবারের লোকজন। কোভিড চিকিৎসার এহেন বিল দেখে চোখ কপালে ওঠে স্বাস্থ্য কমিশনের কর্তাদের। এরপরেই ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দু’লক্ষ টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন। পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আরও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘ওই বিল পর্যালোচনা করেছে কমিশন। বিল খতিয়ে দেখে কমিশনের পর্যবেক্ষণ অন্তত সাড়ে তিন লক্ষ টাকা বেশি বিল করা হয়েছে। এত টাকার ওষুধের বিলের কোনও ব্যাখ্যা আমরা খুঁজে পাইনি। রোগীর ফুসফুসের অবস্থা যাচাই করার অত্যাধুনিক এক টেস্ট রয়েছে। যার নাম রেসপিরেটরি প্যাথোজেন প্যানেল টেস্ট বা বায়োফায়ার টেস্ট। এই টেস্টের খরচ প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী এই টেস্ট করার আগে রোগীর পরিবারের লিখিত অনুমতি নিতে হয়। যা নেওয়া হয়নি এই রোগীর ক্ষেত্রে। এক দিনে চারবার রোগীর ব্লাড গ্যাস টেস্ট করা হয়। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একজন রোগীর চারবার ব্লাড গ্যাস টেস্ট করানোরও কোনও যৌক্তিকতা কমিশনের প্যানেলভুক্ত চিকিৎসকেরা খুঁজে পাননি।’
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান আরও জানিয়েছেন, ‘পঞ্চমবার একই অভিযোগ ফের উঠল। তাই আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করলাম।’
আরও পড়ুন বাড়তি বিলের অভিযোগে ৭ হাসপাতাল-নার্সিং হোমকে জরিমানা স্বাস্থ্য কমিশনের
জরিমানার টাকা সাধারণত সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল স্বাস্থ্য কমিশনের কাছে জমা করে। এই প্রথম সেই নিয়ম বদলানো হল দরিদ্র রোগীর পরিবারের অনুরোধে। ডালিয়া দেবী স্বাস্থ্য কমিশনে জানিয়েছিলেন, মেয়ের বিয়ে সামনে। মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমিয়েছিলেন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব শেষ। এরপরই মানবিক দিক দিয়ে বিচার করে সমস্ত টাকাটা রোগীর পরিবারের হাতে দিতে বলেছে স্বাস্থ্য কমিশন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মেডিক্লেমের টিপিএ সংক্রান্ত নিয়ম মেনেই বিল করা হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্য কমিশন যে নির্দেশ দিয়েছে, সেটা তাঁরা মেনে নিচ্ছেন।