সন্দীপ সরকার, অরিন্দম সেন ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা : হাসপাতাল চত্বরে অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের (Health Department) ভর্ৎসনার মুখে পড়ল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (Kolkata Medical College) কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে কার্যত পুরসভার ঘাড়ে দায় ঠেলেছে কর্তৃপক্ষ। আর এনিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। 


হাসপাতালের দেওয়ালে পানের পিকের দাগ ! হাসপাতাল চত্বরে যত্রতত্র ছড়িয়ে আবর্জনা। পড়ে রয়েছে ব্যবহৃত গ্লাভস, সিরিঞ্জ, তুলো, গজ।রক্ত পরীক্ষার ভায়াল থেকে শুরু করে রোগীদের ব্যবহৃত বিছানা। এই ছবি রাজ্যের অন্যতম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের !


চিকিৎসাধীন সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমনকে দেখতে বৃহস্পতিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এই ছবি তাঁর চোখ এড়ায়নি। মেডিক্যালের এই ছবি দেখে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। পরদিনই স্বাস্থ্যভবনে কলকাতা মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ, কলকাতা পুরসভার সাফাই বিভাগ এবং পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের স্বাস্থ্য ভবনে তলব করেন তিনি।

সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য সচিব জানতে চান, কেন হাসপাতাল চত্বর অপরিচ্ছন্ন ? ঠিকমতো জঞ্জাল সাফাই হয় না কেন ? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের তরফে জানানো হয়, হাসপাতাল চত্বরে সাফাইয়ের কাজ করে কলকাতা পুরসভা। এজন্য পুরসভাকে বছরে ২ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। পুরসভার তরফে প্রতিদিন ২৮ জন করে সাফাইকর্মী আসার কথা থাকলেও কাজে আসেন ৪-৫ জন।

সূত্রের খবর, সাফাইয়ের পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক আধিকারিককে দিয়ে নথিতে নিয়মিত সই করানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও এত অপরিচ্ছন্নতা কেন ? নজরদারি কতটা চালানো হয় ? এই প্রশ্ন করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সদুত্তর দিতে পারেননি বলে সূত্রের খবর।

অবিলম্বে হাসপাতাল পরিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। এরপরই শনিবার জরুরি বৈঠকে বসে রোগী কল্যাণ সমিতি। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুরসভার কাজে নজরদারি করা হবে। এনিয়ে পুরসভার সঙ্গে কথা বলা হবে। হাসপাতালে স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক সাফাই কর্মী ও গ্রুপ ডি কর্মীদের ৩৫০ শূন্যপদ পূরণ করা হবে। বেশ কয়েকটি সংস্থাকে সাফাইয়ের কাজ দেওয়া হবে। নজরদারির দায়িত্বে থাকবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ও ডেপুটি সুপাররা।


কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায় বলেন, "কলকাতা পুরসভা যেমন করছে করবে। পাশাপাশি আমরাও একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করব। বেসরকারি হাসপাতাল যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, একইভাবে সরকারি হাসপাতালও যাতে সেরকম পরিষ্কার থাকে, তা আমরা দেখব।" 

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, সাফাইয়ের জন্য বছরে ২ কোটি টাকা কলকাতা পুরসভাকে দেওয়া হলেও তাদের যা কর্মী আসার কথা, আসেন না। হাসপাতালের সাফাইকর্মীদের মধ্যেও কাজে না এসে সই করার প্রবণতা দেখা গেছে। কড়া হাতে এগুলি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।


এনিয়ে চিকিৎসক ও বিজেপি নেতা ইন্দ্রনীল খাঁ বলেন, "এখানে মেডিক্যাল কলেজগুলো পরিষ্কার রাখার জন্য যে ২ কোটি টাকা দিচ্ছে, সেখানেও পুরসভা কোনও দুর্নীতি করেছে কি না সেটা তো দেখা দরকার। একটা হাসপাতালে সুস্থ হওয়ার জন্য মানুষ আসেন। অসুস্থ হওয়ার জন্য আসেন না। কিন্তু, এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হয়ে আছে, এত আবর্জনা হয়ে আছে, সেখানে মানুষ আধ ঘণ্টা থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।"


কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, "মেডিক্যাল কলেজের ভেতরে পুরসভার এক্তিয়ার নেই যে জঞ্জাল সাফাই কর্মীরা যাবেন। যেহেতু ওখানে অনেক রেস্তোরাঁ বা খাবারের স্টল থেকে অনেক নোংরা পড়ে, দু'বারের পরিষ্কারে ঠিক হচ্ছে না, তাই আবার পরিষ্কার করতে হবে। মেডিক্যাল কলেজের ভেতরেও পিডব্লুডিকে বলা হয়েছে, পরিষ্কার করতে।"

যদিও এরপরও হাসপাতাল চত্বরের বাস্তব ছবিটা বদলায়নি।