ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : মৌলালির পরে এবার একবালপুর। পুলিশই ‘ডাকাত’! ট্র্যাভেল এজেন্সি কোম্পানির কর্মীকে অপহরণ করে ৩৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা লুঠের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল একবালপুর থানার ২ কনস্টেবল, ১ সিভিক ভলান্টিয়ার সহ ৬ জনকে।
রক্ষকই ভক্ষক!
ফের একবার উঠল চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। মৌলালির পর এবার একবালপুর। সমাজের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে, সেই পুলিশকর্মীদের (Police) বিরুদ্ধেই উঠল, টাকা লুঠের অভিযোগ! এক ব্যবসায়ীর প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা লুঠের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল একবালপুর থানার (Ekbalpore Police Station) ২ কনস্টেবল, ১ সিভিক ভলান্টিয়ার সহ মোট ৬ জনকে।
কীভাবে ঘটল গোটা ঘটনা ?
পুলিশ সূত্রে খবর, হোলিল্যান্ড ফরেক্স অ্যান্ড ট্র্যাভেলস নামে একবালপুরের একটি ট্রাভেল এজেন্সির এক কর্মী বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ৩৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে খিদিরপুরের এক রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। মহম্মদ আরবাজ নামে ট্র্যাভেল এজেন্সির ওই কর্মীর দাবি, ব্যাঙ্কের খুব কাছে, তাঁর স্কুটিটি আটকান ২-৩ জন। তাঁরা নিজেদের একবালপুর থানার পুলিশকর্মী বলে পরিচয় দেন।
আক্রান্তের দাবি, এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়, ডায়মন্ড হারবার রোডের এক হোটেলে। সেখানে গিয়ে, তাঁকে মারাত্মক মারধর করা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয়, সঙ্গে থাকা ৩৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
অন্য গল্প ফাঁদারও অভিযোগ
অভিযোগ, এরপর পুরো অন্য গল্প ফাঁদেন একবালপুর থানার ২ অভিযুক্ত কনস্টেবল ও সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁরা থানায় এসে বলেন, ওই কর্মীর থেকে ১৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। কার টাকা, সদুত্তর না দেওয়ায়, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, বাকি ১৮ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাত্ করে নেন পুলিশকর্মীরা।
পুলিশ সূত্রে দাবি, কনস্টেবল ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের বক্তব্যে অসঙ্গতি মেলায়, ট্রাভেল এজেন্সির কর্মীকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে ডাকা হয় কোম্পানির মালিককে। তাতেই সামনে আসে, গোটা ঘটনা। মালিক জানান, তিনিই কর্মীকে ওই টাকা ব্যাঙ্কে রেখে আসতে বলেছিলেন।
এরপরই টাকা লুঠের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় একবালপুর থানার কনস্টেবল প্রভাত বেরা। কনস্টেবল স্বপন কুমার বিশ্বাস ও সিভিক ভলান্টিয়ার তোতন শেখকে।
তীব্র সমালোচনা
ঘটনার খবর সামনে আসতেই প্রাক্তন পুলিশকর্তারা তীব্র সমালোচনা করেছেন। রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত বলেছেন, 'এরা কুলাঙ্গার। ব্যতিক্রমী। এদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। চাইব কমিশনার যেন দ্রুত চার্জশিট দিয়ে, কাল কুটুরির মধ্যেই থাকে। সেটা এনসিওর করুন।' এদিকে, প্রাক্তন পুলিশ কর্তা সলিল ভট্টাচার্য বলেছেন, 'ক্রাইম কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে! সরকারকে ম্যালাইন করছে।'
আগেও এমন ঘটনা
গত মাসেই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ডাকাতির অভিযোগে স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক কনস্টেবলকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। জুন মাসে বড়বাজারে সোনার দোকানের কর্মচারীর কাছ থেকে গয়না লুঠের অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মী-সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এবার একবালপুরেও সেই একই অভিযোগ উঠল।
আরও পড়ুন- মৃত মালিকের সই জাল করে বাড়ি দখলের চেষ্টা, বিধাননগরে গ্রেফতার অভিযুক্ত প্রোমোটার