সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: জ্যৈষ্ঠের জ্বলুনি বাড়াল আবহাওয়ার খবর। আরও কয়েকদিন আগুন গরমে পুড়বে বাংলা। এবার বর্ষা ঢুকবে দেরিতে। আশঙ্কার কথা জানাল আবহাওয়া দফতর।  সপ্তাহ জুড়ে দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বজায় থাকবে। রেহাই নেই উত্তরবঙ্গেরও। দহন জ্বালা প্রবল হবে  মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর। 


কলকাতায় প্যাচপ্যাচে গরম


মঙ্গলবার বিকেলের বৃষ্টি বড় একটা স্বস্তি দিতে পারেনি কলকতাকে। বরং গুমোটভাব বাড়িয়েছে। কলকাতা সহ উপকূলের জেলাগুলিতে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি থাকারই কথা আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুসারে। পশ্চিমের জেলাগুলিতে কিছুটা শুষ্ক গরমই অনুভূত হবে। বজায় থাকবে লু বইবার এর পরিস্থিতি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বাড়ছে, তাই রাতের তাপমাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে না। 


শনিবার পর্যন্ত তাপপ্রবাহের সতর্কতা থাকছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া এবং হুগলিতে। কলকাতা , উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বজায় থাকবে। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকায় আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি চরমে উঠবে এই জেলাগুলিতে। বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বীরভূম মুর্শিদাবাদ সহ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে।  


বৃষ্টি কোথায় কোথায়


আগামী কয়েক দিন খুব হালকা বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের পার্বত্য এলাকায়। উত্তরবঙ্গে দার্জিলিং , কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি এই পাঁচ জেলাতে শনিবার থেকে বৃষ্টি বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস। উত্তরবঙ্গের মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা থাকবে। জলপাইগুড়ি কোচবিহার আলিপুরদুয়ার এর কিছু অংশে তাপপ্রবাহের মত পরিস্থিতি। শিলিগুড়ি বাগডোগরাতেও তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি থাকবে শনিবার পর্যন্ত। 


কলকাতায় চরম অস্বস্তিকর আবহাওয়া বজায় থকবে। তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা । বেলা যত বাড়বে গরম ও অস্বস্তি ততই বাড়বে। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকায় আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি চরমে। আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ ডিগ্রি বেশি । মঙ্গলবার বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে যা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৫২ থেকে ৯০ শতাংশ। 


হাওড়া জেলার উলুবেরিয়াতে তাপমাত্রা পৌঁছায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুন্ডা তে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছুঁয়েছিল ৪১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বীরভূমের সিউড়িতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.২ ডিগ্রি  এবং শ্রীনিকেতনে তাপমাত্রা ছিল ৪১.৬ ডিগ্রি। পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে তাপমাত্রা ৪১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঝাড়গ্রামে তাপমাত্রা ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরুলিয়াতে তাপমাত্রা ছুঁয়েছিল ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


শৈলশহর দার্জিলিঙে তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গেছে। দার্জিলিং জেলার সমতলের অংশ বাগডোগরাতে তাপমাত্রা ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। শৈল শহর কালিম্পং এদিন তাপমাত্রা ছিল ২৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বালুরঘাটে তাপমাত্রা ছুঁয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।


কেরল উপকূলের কাছাকাছি পূর্ব মধ্য আরব সাগরে গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম বিপর্যয়। নাম দিয়েছে বাংলাদেশ। এটি ক্রমশ উত্তর দিকে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতের মৌসম ভবন। আপাতত গুজরাত উপকূলের দিকে এটি ক্রমশ এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায় সেদিকে নজর থাকবে আবহবিদদের।


পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং মায়ানমার উপকূলে বঙ্গোপসাগরেও তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। এটি আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে শক্তি বাড়াবে। এই সিস্টেম ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় কিনা সেদিকেই নজর আবহবিদদের।