মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: উত্তরের শীতল হওয়া দক্ষিণে প্রবেশ করতেই শুরু শীতের আমেজ। প্রকৃতির নিয়মে এই খবর সুদূর সাইবেরিয়া, ইউরোপের পাখিদের কাছে পৌঁছে যেতেই ডানা মেলে এ রাজ্যে প্রবেশ করে (Migratory Birds)। চেনা জলাশয় এবং চেনা জঙ্গলে অতিথি হিসাবে পৌঁছে যায় পরিযায়ী পাখিরা। পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার রক্ষিতপুরের সরকারি জলাশয়ও ছিল পরিযায়ী পাখিদের প্রাণকেন্দ্র। এবারেও শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পরিযায়ী পাখিদের আসা শুরু হয়েছে। আর পরিচয় পাখিরা চেনা জলাশয়গুলিতে ভিড় জমাতে শুরু করছে। কিন্তু পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার রক্ষিতপুরের সরকারি জলাশয়ে অতিথি পাখিদের আপ্যায়নে ব্যাপক ত্রুটি। আর আপ্যায়ন না পেয়ে মুখ ফিরিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।


' ক্ষোভে' মুখ ফেরাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা


২০০৭ সালে বাম আমলে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কাঁকসার রক্ষিতপুর সংলগ্ন এলাকায় দশ-বিঘার অধিক জমিতে একটি জলাশয় এবং এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করার জন্য ছাগলের খামার গড়ে উঠে। স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে জলাশয়ে মাছ চাষ এবং ছাগলের খামারে ছাগল চাষ শুরু হয়। প্রথম থেকেই জঙ্গল লাগোয়া এই জলাশয় পরিযায়ী পাখিদের পছন্দের জায়গা হয়ে ওঠে। তখন কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি ভিড় জমাত ওই জলাশয়ে। হঠাৎ এক সময় বন্ধ হয়ে যায় ছাগলের খামার। কচুরিপনা আর আগাছায় ঢাকতে শুরু করে ওই জলাশয়।


তৃণমূল সরকারের আমলে উদ্যোগ নেওয়া হলেও হয়নি সংস্কার


তৃণমূল সরকারের আমলে একবার জলাশয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আর হয়নি সংস্কার। তারপর বছর বছর কমতে শুরু হয় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। বছর পাঁচেক আগে কয়েকশো পরিযায়ী পাখি দেখা গিয়েছিল ওই জলাশয়ে। গত বছর ক্ষোভের মধ্যেও কিছু পরিযায়ী পাখি এসেছিল। এবার হাঁসফাঁস করতে থাকা জলাশয় দেখে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ওঁরা। এলাকার পক্ষীপ্রেমী অশোক রায় জানান এই জলাশয়ের সামনে পরিযায়ী পাখিদের দেখার জন্য বহু মানুষ ভিড়ও জমাতো। বর্তমানে ওই জলাশয় চোখে দেখা যাচ্ছে না। এত বড় জলাশয় কচুরিপনা আর আগাছায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাছ চাষ। জলাশয়ের পাড়ের মাটিও জলাশয়ে পরে জলাশয় ছোট হতে শুরু হয়েছে।


আরও পড়ুন, রক্তে ভিজে শুকনো পাতা, গড়বেতার জঙ্গলে যুবক-যুবতীর ঝুলন্ত দেহ ! আঁতকে উঠলেন স্থানীয়রা


অতিথি পাখিরা এসেই বা থাকবে কোথায় ?


অতিথি পাখিরা এসেই বা থাকবে কোথায় ? সেজন্যই তাঁরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। দ্রুত ওই জলাশয় সংস্কার করা হোক দাবি তুলেছেন তিনি। স্থানীয়দেরও দাবি নতুন করে জলাশয় সংস্কারের পাশাপাশি খোলা হোক ছাগলের খামার। দুর্গাপুর রেঞ্জের রেঞ্জার সুদীপ ব্যানার্জি জানান ওই জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিরা আসছে কিন্তু সংখ্যা কমেছে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের সাথে এবং উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যাতে ওই জলাশয়টি সংস্কার করা যায়, সেই ব্যবস্থা করবেন। পরিযায়ী পাখিদের যাতে কোনও  সমস্যা না হয় সেদিকেও নজরদারি বাড়াবেন। কবে আবার অতিথি পাখিরা পুরনো ছন্দে আপ্যায়ন পেয়ে ওই জলাশয়ে ফিরে আসে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে এলাকাবাসীরা। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।