বিশ্বজিৎ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: 'সমাজবিরোধীদের দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন, ঘেরাও করার চেষ্টা করছেন !' এবার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের (Pradip Sarkar) বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ খড়গপুর পৌরসভার (Kharagpur Municipality) তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের। 'কিছু মহিলা ও সমাজবিরোধীদের দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন, আমাদের বাড়ি ঘেরাও করার চেষ্টা হচ্ছে গত দু'তিন দিন ধরে। ইতিমধ্যে, (বুধবার) সকালে ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পি. প্রভাবতীর বাড়ি ২-৩ ঘন্টা ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। আমরা প্রাণহানির আশঙ্কায় ভুগছি! এই সবকিছুর জন্য দায়ী পৌরপিতা প্রদীপ সরকার।' বুধবার সন্ধ্যায় খড়গপুর টাউন থানায় এমনই অভিযোগ জমা পড়ল খড়্গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে। আর, অভিযোগ করলেন তাঁর দলের (তৃণমূলেরই) ১৫ জন কাউন্সিলর।


দলের ২৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৮ জন কাউন্সিলর চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের কাজকর্ম ও ব্যাবহারে বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে সরাসরি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত জানিয়েছিলেন।নিজেদের মধ্যে একের পর এক বৈঠক সেরেছেন। এমনকি, বুধবার দুপুরে নিজেদের সিদ্ধান্ত বা অভিযোগ জানাতে ১৮ জন কাউন্সিলর-ই সশরীরে পৌঁছে গিয়েছিলেন মেদিনীপুরে জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা 'র অফিসে। আর, এরপরই, বুধবার সন্ধ্যায় প্রদীপের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ল খড়্গপুর টাউন থানায়। প্রসঙ্গত, পৌর প্রধানের উপর ক্ষুব্ধ খড়গপুর পৌরসভার একুশ জন তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর। খড়গপুর পৌরসভায়২৫ জন তৃণমূল কাউন্সিলরের (TMC Councilor) মধ্যে ২১ জন কাউন্সিলর পৌর প্রধান প্রদীপ সরকারের উপর ক্ষুব্ধ। তারা পৌর প্রধানকে সরানোর আর্জি নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্সের সিআইসি সি.এইচ বিষ্ণু প্রসাদ।


তিনি পৌর প্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে বলেন,  'তৃণমূল কংগ্রেসের ২১ জন কাউন্সিলর একসাথে মিলে বলছে চেয়ারম্যান রেজিগনেশন দিয়ে ওই জায়গায় নতুন কেউ চেয়ারম্যান হলে ভাল হয়। চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে কোঅপারেশন করছে না, তাহলে কাজ কী করে হবে ? আমাদের একটা সমস্যার জন্য দশ বার বলতে হয় ওনাকে। উনি বলেন হবে। ওয়ার্ডে কোন কাজ না হওয়ার জন্য। আমরা সবাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিযোগ জানিয়েছি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অন্য কেউ চেয়ারম্যান হলে ভাল হয়। এই চেয়ারম্যান আমাদের চাই না।' খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি।


জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের ক-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, 'দলের লোকেরা দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে হয়তো জানিয়ে থাকতে পারেন। সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি খড়গপুর গিয়ে সব কাউন্সিলরদের একসাথে নিয়ে বসবো। দলীয় কর্মসূচি একসাথেই করা হবে। এটা নিয়ে বিভেদ খুব একটা থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব, রাজ্য নেতৃত্ব যেভাবে নির্দেশ দেবেন সেভাবেই কাজ হবে। এই ব্যাপারে কে কোথায় দরখাস্ত করেছে আমি জানি না। আর কেউ যদি দরখাস্ত করেই থাকেন, সেই নিয়ে দল খুব একটা বিভ্রাট হয়ে যাবে সে কোনও ব্যাপার নয়। আমাদের মূল লক্ষ্য সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে, কাজ করা। মোহনপুর বেলদা, কেশিয়াড়ি সবাইকে নিয়ে যেমন একজোট করে কাজে নামতে চাইছি ঠিক সেভাবেই খড়গপুরকে নিয়ে একজোট করে, আমাদের গ্রামের কাজগুলোতে পাঠিয়ে দেব। দলের মধ্যে সবার স্বাধীনতা আছে। তবে দল এই ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত সঠিক সময় নেবেন।'


আরও পড়ুন, শুভেন্দুর রক্ষাকবচকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য


জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, 'এই পরিস্থিতি সারা রাজ্যব্যাপী চলছে। খড়গপুর তো কোন ব্যতিক্রম নয়, তাই খড়গপুরেও একই ঘটনা। খড়গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার দলের কাউন্সিলাররা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। কারণ প্রদীপ সরকার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। তাঁকে দিয়ে খড়্গপুরের উন্নয়ন সম্ভব নয়। নাগরিক পরিষেবা থমকে আছে। খড়গপুর শহরে যেসব বহুতল উঠেছে, সেই কন্ট্রাকটরদের কাছে মোটা অর্থ নিয়ে সেই সমস্ত প্ল্যান পাশ করার অভিযোগ। এবং সব থেকে বড় অভিযোগ আছে, আবাস যোজনা নিয়ে। আরও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এই সমস্ত অভিযোগ তৃণমূলের কাউন্সিলররা করছে। একসময় ওনার ঘনিষ্ঠ এক কন্টাকটার ছিলেন খড়গপুরে যিনি এবার তৃণমূলের কাউন্সিলর হয়েছেন। তার সাথেও উনার বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। প্রদীপ সরকারকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল খড়্গপুরে বিশাল আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা যে কথা বলে এসেছি। সে আজ তৃণমূলের কাউন্সিলাররা বলছেন।'