সৌমেন চক্রবর্তী, পশ্চিম মেদিনীপুর: মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও, তাঁর হাত ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরের পাথরায় প্রাণ ফিরে পেয়েছিল ৪২টি হিন্দু মন্দির। ১৯৯৪ সালে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও। এবার রাজনীতির জন্য় সারা দেশে সম্প্রীতি ও ঐক্য নষ্টের অভিযোগ তুলে সেই পুরস্কারই ফেরত দিতে চাইলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ইয়াসিন পাঠান।
বুক দিয়ে ইতিহাস সামলান তিনি। মুসলিম হয়েও তাঁর ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে ধ্বংসপ্রাপ্ত বহু হিন্দু মন্দির। সম্প্রীতির নজির গড়ায় রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছেন কবীর সম্মানও। কিন্তু তাঁর চোখের সামনেই আজ যখন কোথাও কোথাও ঐক্য়-সম্প্রীতি খান খান...দাঙ্গার আগুন...লুঠপাঠ...তখন আর স্থির থাকতে পারছেন না পশ্চিম মেদিনীপুর পাথরার ইয়াসিন পাঠান।রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পাওয়া পুরস্কারই ফেরত দিতে চাইছেন তিনি!
বুধবার সোশাল মিডিয়া পোস্টে তিনি লেখেন,বাহান্ন বছর ধরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ৪২টি প্রাচীন মন্দির, স্থাপত্য রক্ষা করে বড়ই ভুল করেছি।ক্ষমা করো দয়াময় ''ঈশ্বর-আল্লাহ''। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপক ইয়াসিন পাঠান বলেন, ওয়াকফ আইন কোনওভাবে সমর্থন করতে পারছি না। তা বাদেও কোনওভাবেই এই নিয়ে হিংসা হানাহানিও মেনে নিতে পারছি না। তাই পুরস্কার ফেরাতে বাধ্য হচ্ছি।
মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও, ছাত্রাবস্থা থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের পাথরার ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরগুলি নজর কাড়ত ইয়াসিন পাঠানের...সেই থেকেই ইচ্ছা জন্মায় কিছু করার, ধর্মীয় বিশ্বাসের উর্ধ্বে গিয়ে, চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে ইতিহাস রক্ষায় লেগে পড়েন তিনি। তাঁর তত্ত্বাবধানে, পাথরায় প্রাণ ফিরে পায় ৪২টি হিনদু মন্দির। সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ায় ১৯৯৪ সালে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মার হাতে 'কবীর সম্মান' পান তিনি। আজ চোখের সামনে হিংসা হানাহানি দেখে তাঁর প্রাণ কাঁদছে।বিভেদের আগুনে কি পুড়ে খাঁক হয়ে যাবে ইয়াসিন পাঠানদের তিল তিল করে গড়া সম্প্রীতির স্বপ্ন? জিতে যাবে ধর্মের চোখ রাঙানি?
প্রসঙ্গত, হিংসা বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদে এবার অভয়া ক্লিনিক খুলল ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। মুর্শিদাবাদের দাঙ্গার প্রতিবাদে আগেই পথে নেমেছিল অভয়া মঞ্চ। এবার দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকায় গিয়ে মেডিক্য়াল ক্য়াম্প করলেন আর জি করের প্রতিবাদী ডাক্তাররা। আর সেই অভয়া ক্লিনিকে চিকিৎসা করাতে গেলেন জাফরাবাদের দুজন স্বজনকে হারানো পরিবারের সদস্য়। দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় মানুষদেরও হাহাকার শোনা গেল অভয়া ক্লিনিকে।
হিংসায় নিহত হরগোবিন্দ দাসের মেয়ে যুথিকা দাস বলেন, আমার বাবাকে যে খুন করেছে তাদের আমরা শাস্তি চাই। দাঙ্গা-বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদের অভয়া ক্লিনিকেও, শোনা গেল স্বজনহারার এরকমই হাহাকার। তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন আর জি কর-কাণ্ডের আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। দাঙ্গার আগুন কারও ঘর পুড়িয়েছে। কারও স্বজন কেড়ে নিয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদের মানুষগুলো বাধ্য় হয়েছেন, বাড়ি থেকে পালিয়ে, মালদার ক্য়াম্পে আশ্রয় নিতে। শুক্রবার তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে, সেখানে পৌঁছে গেলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।