দশমী ( Dashami )। চোখের জলে মাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটিকে পালন করা হয় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভর বিজয়দিবস হিসেবে। একদিকে মনে করা হয়, ৯ দিন টানা মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর এদিনই তাকে বধ করেছিলেন মা। আবার এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ত্রেতা যুগে রাবণের বিরুদ্ধে রামের জয়ের কাহিনিও। 


অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের বিজয়ের উদযাপন
দশেরা বা বিজয়া দশমী ( Bijaya Dashami ) হল দুর্গাপুজোর শেষ দিন। আসলে অশুভ যা কিছু তার বিনাশ, ও শুভ শক্তির জয়ের উদযাপন হল দশেরা। প্রতি বছর দশেরা উৎসব সারা দেশজুড়ে পালিত হয় রাবণ দহন ও আতসবাজির আলোয় । মানুষের বিশ্বাস, দশেরার দিনেই দশানন রাবণকে পরাজিত করে  শ্রী রামচন্দ্র রাবণকে বধ করে যুদ্ধে জয়ী হন। তাই এই উৎসব আসলে অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের বিজয়।  মনে করা হয় রাবণ বধের মাধ্যমে অধর্মের নাশ করে  ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রামচন্দ্র। 

 পিতৃপক্ষ পেরিয়ে মহালয়া তিথির পরদিন থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় নবরাত্রি। নয়দিন মহামায়ার বিভিন্ন রূপের পুজো চলে। তারপর দশম দিনে এই উৎসব পালিত হয়।  একদিকে মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন, অন্যদিকে রাবণদহন, এই দুইয়ে মিলে দশেরা। 


হিন্দুধর্মে ভগবান রামকে আত্মচেতনার প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। আর রাবণ বীর, দৃঢ়চেতা, শিবভক্ত হলেও, সীতাহরণকারী লঙ্কাধীশকে নেতিবাচক শক্তি হিসেবেই দেখা হয়। রাবণের দশটি মাথাকে মানুষের  দশটি খারাপ মানসিকতার তুলনা করা হয়।  যেমন রাগ, লোভ, হিংসা, অহংবোধ, অসহিষ্ণুতা, অসংবেদনশীলতা, ভয়, ঘৃণা, অনুশোচনা, লালসা। এই খারাপ স্বভাবগুলির বিনাশসাধনের প্রতীকই রাবণ দহন।  


কোথায় দশেরা কেমন
সারাদেশে দশেরা পালন হয় নানা রীতিতে। যেমন হিমাচল প্রদেশের কুলুতে কুল্লু উৎসব পালিত হয় দশেরায়।  এই উপলক্ষ্যে বিশাল মেলা হয় ৭ দিন ধরে। দিল্লিতে রামলীলা ময়দানে দশ দিন ধরে রামায়ণের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে নাটক হয়। এর সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও চলে। সব শেষে সাড়ম্বরে পালন করা হয় দশেরা।  বারাণসীতে এই  উৎসব সুপ্রাচীন কাল থেকে পালিত হয়। এক মাস ব্যাপী রামলীলা চলে। দশেরা উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে মহীশূর। আলোর মালায় সাজানো হয়েছে মহীশূর প্যালেস। দশেরা উপলক্ষ্যে ২৮০ কেজি ওজনের সোনার সিংহাসন চাপানো হয় হাতির পিঠে। তার ওপর বসেন মহীশূরের রাজা। চতুর্দোলায় সাজিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়। দেশ-বিদেশ থেকে আসেন পর্যটকরা। কর্ণাটকের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকশিল্পীরা পা মেলান দশেরা শোভাযাত্রায়।