কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের ফ্ল্য়াট থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ডায়েরির পর, এবার ইডির হাতে কুন্তলের হোয়াটস অ্য়াপ চ্য়াট! ইডি সূত্রে খবর, ডায়েরির কয়েকটি হিসেবের সূত্র ধরে উঠে আসা তথ্য় যাচাই করতে গিয়ে, সামনে এসেছে টেক্সটগুলি। যেখানে বেশ কয়েকটি জেলার মিডলম্য়ানদের সঙ্গে নিয়োগ সংক্রান্ত কথাবার্তা হয়েছে মেসেজে। তবে, একাধিক টেক্সট-ই ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। এমন কী কথাবার্তা হয়েছিল ওই টেক্সটে? জানতে সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছে ইডি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে মিডল ম্য়ানের ভূমিকাও। ইতিমধ্যেই তাপস মণ্ডলের মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। দুজনের মধ্য়ে ঠিক কী কী বিষয়ে কথা হত, তা খতিয়ে দেখছেন আধিকারিকরা।


নিয়োগ-দুর্নীতিতে গ্রেফতার যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের জোড়া ডায়েরিও ইডি-র নজরে। প্রাথমিকভাবে ইডির অনুমান, এই দুই ডায়েরিতেই রয়েছে টাকা পয়সার সমস্ত হিসেব। কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতারের দিন, তাঁর ঘর থেকে এই দুই ডায়েরি বাজেয়াপ্ত করে ইডি। সূত্রের খবর, সেই দুই ডায়েরিতে সাঙ্কেতিক ভাষায় বেশ কিছু ডিজিট লেখা রয়েছে। কুন্তলকে জেরা করে সেই সব সাঙ্কেতিক ভাষার অর্থ জানতে চাইছে ইডি। ইডির অনুমান, এই ডায়েরিতেই লুকিয়ে আছে, চাকরি বিক্রির বিনিময়ে কুন্তলের টাকা নেওয়ার অঙ্কটা। এদিকে সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যুর পর আরও সতর্ক হয়ে গেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। সূত্রের খবর, কুন্তলকে জেরা করার সময় আগাগোড়া ভিডিওগ্রাফি করা হচ্ছে। যাতে, পরে কোনওরকম অত্যাচারের অভিযোগ না করতে পারেন কুন্তল। যখন জেরা করা হচ্ছে না, তখনও কুন্তলকে রাখা হচ্ছে সিসি ক্যামেরার নজরে। রাতে কুন্তলের উপর নজর রাখতে থাকছেন ইডি-র সিনিয়র আধিকারিক। সূত্রের খবর, কুন্তল শৌচালয়ে গেলেও তার উপর নজর রাখা হচ্ছে। 


নিয়োগকাণ্ডে আপাতত ইডির জালে হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কোটি কোটি টাকা তোলার যে অভিযোগ উঠছে, তা কি কুন্তল একাই তুলেছিলেন? না, টাকা তুলতে এজেন্টও রেখেছিলেন তিনি? এই প্রেক্ষাপটেই সামনে আসছে বেশ কয়েকটি নাম। 


নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতার করেছে ইডি। তদন্তে নেমে ৩০ কোটির হিসেব পাওয়া গেছে। টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকারও করেছেন কুন্তল। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা কি কুন্তল একাই তুলেছেন?টাকা তোলার জন্য কি এজেন্ট রেখেছিলেন কুন্তল? যদি তাই হয়, তবে নিয়োগ দুর্নীতির নেটওয়ার্কে কারা কারা যুক্ত? 


এই প্রসঙ্গেই সামনে এসেছে বেশ কিছু নাম!তাঁদের মধ্যে গোপাল দলপতির নাম শোনা গিয়েছিল কুন্তলের মুখেই। কে এই গোপাল দলপতি? কীভাবে তিনি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে যুক্ত? তারই খোঁজে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগর থানার কসবা গ্রামে গোপালের বাড়িতে পৌঁছেছিলাম আমরা। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের দাবি, গোপালের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগই নেই।


জানা গেছে, চিটফান্ড মামলায় গ্রেফতার হয়ে গোপাল দলপতি এখন তিহাড় জেলে বন্দি। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গোপাল দলপতির সঙ্গেই সামনে এসেছে তাপস মিশ্রের নাম। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি এক নম্বর ব্লকের ভন্ডুবসান গ্রামের বাসিন্দা তাপস।


গত বছর ডিসেম্বরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে হাজিরার নোটিস সেঁটে দিয়ে এসেছিল ইডি। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাপস মণ্ডলের মুখে শোনা গিয়েছিল তন্ময় গোস্বামী নামে আরও একজনের নাম। বাঁকুড়ার তালডাংরা বাজারে, ঝাঁ চকচকে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় মোড়া এই দোতলা বাড়িতেই থাকেন তন্ময় গোস্বামী। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, আগে পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিলেন তন্ময়। সূত্রের খবর, তন্ময় গোস্বামী, তাপস মিশ্র এবং গোপাল দলপতি - নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এই ৩ জনের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে ইডি।