কলকাতা: সন্ধে হব হব। কলকাতার আকাশে তখনও আলোর রেশ রয়ে গিয়েছে। এমনই এক সন্ধ্যায় দৌড় থামালেন গর্ভধারিনীর স্রষ্টা। বাংলা সাহিত্যের জগতে যেন ঝুপ করে নেমে গেল গাঢ় অন্ধকার। সোমবার সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে বাংলা সাহিত্যের আকাশ থেকে যেন খসে পড়ল গোটা 'কালপুরুষ'।


জন্ম চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে। তখনও ভারত ইংরেজদের অধীনে। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম। চাবাগানের সাহচর্যে কেটেছে তাঁর শৈশব-কৈশোর। সেখানেই জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে পড়াশোনা। তারপর সোজা কলকাতায়। ১৯৬০ সালে কলকাতায় আসেন সমরেশ মজুমদার। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক, তারপরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। 


তারপর থেকে আজীবন কলকাতায় থাকলেও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান ছিল সারাজীবন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন সমরেশ মজুমদার একদম প্রথম দিকে নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অন্য অনেক দিকেও ঝোঁক ছিল। সেইভাবেই একদিন দেশ পত্রিকায় একটি গল্প লিখে ফেলেন। তারপর সাগরময় ঘোষ উপন্যাস লিখতে বলেন সমরেশকে। তারপর সমরেশ মজুমদারের কলমে সৃষ্টি হল 'দৌড়'। দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হল তাঁর প্রথম উপন্যাস। তারপর থেকেই তাঁর কলম দৌড়ে গিয়েছে ক্রমাগত।


শিশু-কৈশোর উপন্যাস থেকে বড়দের উপন্যাস। সবেতেই সাবলীল তিনি। গোয়েন্দা চরিত্র অর্জুনের স্রষ্টা করেছিলেন সমরেশ মজুমদার। উত্তরবঙ্গ তথা জলপাইগুড়িকে তিনি কতটা ভালবাসতেন সেই পরিচয় পাওয়া যায় অর্জুন চরিত্রটাতেও। কিশোর-সাহিত্যের এই গোয়েন্দার চরিত্রের বাড়ি ছিল জলপাইগুড়ি। 
একাধিক উপন্যাসের জন্য অমর হয়ে থাকবেন সমরেশ মজুমদার। সেই তালিকায় রয়েছে উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষের মতো একের পর এক কালজয়ী উপন্যাস। রয়েছে গর্ভধারিণী, সাতকাহন, তেরো পার্বণ। 'দেশ' পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া মাত্র সাড়া ফেলে 'উত্তরাধিকার'। তাঁর উপন্যাস বুনো হাঁসের পালক এবং কালবেলা উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে সিনেমাও।


অজস্র পুরস্কার:
সমরেশ মজুমদারের সাহিত্যসৃষ্টি পুরস্কার দিয়ে মাপা যায় না। কিন্তু তাঁকে জানতে গেলে পুরস্কারের কথা বাদ দেওয়া অসম্ভব। ১৯৮৪ সালে 'কালবেলা' উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান লেখক। তারও আগে ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার পান সমরেশ মজুমদার। ২০১৮ সালে সেরা বাঙালির সম্মান দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করেছিল এবিপি আনন্দ।


দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। দিন দশেক আগে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে বাইপাসের ধারে অ্যাপেলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থামল তাঁর লেখনী। ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সমরেশ মজুমদার।


আরও পড়ুন: গরমের মরসুমে ট্যান পড়ে ঠোঁটেও, এই সমস্যা এড়িয়ে চলবেন কীভাবে? রইল কিছু সহজ টিপস