সন্দীপ সরকার, হিন্দোল দে, জয়দীপ হালদার: জওয়াদের প্রভাব (Jawad Affect), সঙ্গে অমাবস্যার কটাল। জোড়া ধাক্কায় কোথাও ভাঙল নদীবাঁধ। কোথাও সমুদ্র বাঁধ উপচে জল ঢুকল গ্রামে। তার ফলে দুর্ভোগ বাড়ল গোসাবা, সাগর ও মৌসুনি দ্বীপে (Mousuni Island )। সতর্কতায় দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বন্ধ রাখা হয় ফেরি সার্ভিস (Ferry Service)।


দিঘা (Digha), বকখালিতে (Bakkhali) অশান্ত সমুদ্র। গোসাবায় (Gosaba) ফুলেফেঁপে উঠেছে নদী। নদী বাঁধ ভেঙে ফের জলের তলায় মৌসুনি দ্বীপ (Mousuni Island )। সাগরে জলের তোড়ে উল্টে গেল নৌকা। বাংলায় ঢোকার আগে ঘূর্ণিঝড় জওয়াদ ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়লেও, নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার থেকে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে চলছে বৃষ্টি। সঙ্গে ভরা কটালের জেরে জলস্তর বেড়ে ওঠে হুগলি (Hoogly), হলদি থেকে বিদ্যাধরী নদীর (Vidyadhari River)।


জোড়া ধাক্কায় দক্ষিণবঙ্গের (South Bengal) জেলাগুলিতে কার্যত বিপর্যস্ত জনজীবন। আমফান (Amphan) থেকে ইয়াস (Yash)। একের পর ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কায় বারবার বিধ্বস্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৌসুনি দ্বীপ। এবার জওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টি এবং কটালের ধাক্কায় ফের ভাসল সমুদ্র লাগোয়া এই পর্যটনকেন্দ্র।


চিনাই নদীর বাঁধ ভাঙায়, রবিবার সকাল থেকে মৌসুনি দ্বীপের বালিয়াড়ায় হু হু করে ঢুকতে থাকে জল। প্রায় ২০০ ফুট নদীবাঁধ ভেঙে যাওয়ায়, ঠান্ডার মধ্যে বিপদে পড়েছেন দ্বীপের বাসন্দারা।


মৌসুনি দ্বীপের এক বাসিন্দা শাহাবানু বিবি বলছেন, আমাদের অসহায় অবস্থা। নদী বাঁধ ভেঙে বালিয়াড়া ভাসছে। বাঁধে দাঁড়িয়ে আছি। কোথায় যাব? সরকার এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নিক। 


সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা জানিয়েছেন, নীচু এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে ফ্লাড সেন্টারে রাখা হয়েছে। এক জায়গায় বাঁধের অবস্থা খারাপ হয়েছে।
নামখানা লাগোয়া সাগরের মহিষামারি গ্রামে, সমুদ্র বাঁধ উপচে নোনা জল ঢুকে পড়ায়, আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। 


জলের তোড়, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। এদিন সকালে, সাগরের কচুবেড়িয়ায় মুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে যায় পণ্যবাহী নৌকা। প্রশাসনের তরফে দিনভর চলে সচেতনতামূলক প্রচার। টানা বৃষ্টি ও কটালের ধাক্কা শনিবার থেকে ফুঁসে ওঠা গোসাবার কোরানখালি নদী। শনিবার রাতে বাঁধে ভেঙে প্লাবিত হয় গোসাবার কুমিরমারির দক্ষিণপাড়া। 


কুমিরমারির বাসিন্দা আরতি মণ্ডল জানিয়েছেন, সারারাত ঘুম নেই, ভয়ের জন্য। ভয় করছে বাড়ি ঘর দোর যদি ভেঙে যায়। গরু-বাছুর সব তো চলে যাবে। রাতে জোয়ার বড় হবে।


গোসাবার বিধায়ক সুব্রত মণ্ডলের কথায়, রিং বাঁধটাকে মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। বাঁধ রিপেয়ার করছি। বিপর্যয় কেটে গেলে বড় করে বাঁধ করে দেব।


সমুদ্র উত্তাল না হলেও, দিনভর অশান্ত ছিল দিঘার সমুদ্র। তার সঙ্গে নাছোড় বৃষ্টি। তার ফলে সৈকত শহরে কার্যত হোটেলবন্দি ছিলেন পর্যটকরা।


দক্ষিণ ২৪ পরগনার বকখালিতেও চোখে পড়ে প্রশাসনিত তৎপরতা। নামখানার বিডিও শান্তনু সিংহ ঠাকুর বলছেন, সাড়ে চার হাজার লোককে সরানো হয়েছে। মৌসুনি, বকখালিতে নজর রয়েছে। হোটেলে নতুন বুকিং দুদিনের জন্য বন্ধ।


দুর্যোগের সতর্কতায় বন্ধ রাখা হয় হুগলির সব ফেরিঘাট। হাওড়াতেও এদিন বন্ধ ছিল একাধিক ফেরিঘাট। বেলার পর চলেনি হলদিয়া-নন্দীগ্রাম বন্ধ ফেরি সার্ভিস।