কলকাতা : ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গরাজনীতির আকাশে-বাতাসে। আর সে নিয়েই সমীক্ষা চালিয়েছিল সি ভোটার। জনমত সমীক্ষায় উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সি ভোটারের সমীক্ষকরা, এই সময়ে বঙ্গ রাজনীতির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছিলেন এরাজ্যের ভোটারদের সামনে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্য়া কী?
ভোট দিতে যাওয়ার সময় মানুষের কাছে কতকগুলি ইস্যু বড় হয়ে দাঁড়ায়। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৩০ শতাংশ মানুষ মনে করছেন বেকারত্বেই সবথেকে বড় সমস্যা । মূল্যবৃষ্টি, অর্থকষ্ট ইত্যাদি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশ মানুষের কাছে। অনুন্নয়ন বড় ইস্যু ১৫ শতাংশ মানুষের কাছে। দুর্নীতি বড় ইস্যু ১০ শতাংশ মানুষের কাছে। সাম্প্রদায়িক সংঘাত বড় ইস্যু ৫ শতাংশ মানুষের কাছে। কৃষকদের সমস্যা ৪ শতাংশ মানুষদের কাছে বড় ইস্যু। দেশের আইনশৃঙ্খলা ৩ শতাংশ মানুষের কাছে বড় ইস্যু। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা, সংরক্ষণ ১শতাংশ করে মানুষের কাছে বড় ইস্যু। ১৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, বলতে পারব না।
'CAA' নাকি সন্দেশখালিকাণ্ড -সংরক্ষণ কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে বাংলায় লোকসভা ভোটে?
সি ভোটারের এই প্রশ্নের উত্তরে ২৭ শতাংশ মনে করছেন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হবে সন্দেশখালি। ২৪ শতাংশ মনে করছেন সিএএ বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। ২১ শতাংশ মনে করছেন দুটো ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। ২৮ শতাংশ বলতে পারব না, এমনটাই জানিয়েছেন।
'CAA' চালু হওয়ায় লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কে লাভবান হবে?
সি ভোটারের সমীক্ষায় বলা হয়েছে সিএএ চালু হওয়ায় ৪০ শতাংশ মানুষ মনে করছেন লাভবান হবে বিজেপি, ২৫ শতাংশ মনে করছেন লাভবান হবে তৃণমূল, ৬ শতাংশ মনে করছেন লাভবান হবে বাম কংগ্রেস জোট, ১৩ শতাংশর মত সিএএ নিয়ে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কোনও প্রভাব পড়বে না। ১৬ শতাংশ মনে করছেন তাঁরা এর উত্তর দিতে পারবেন না।
মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় না অমিত শাহ, 'CAA' নিয়ে কে সঠিক ব্য়াখ্য়া দিচ্ছেন?
সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩৩ শতাংশ মানুষ মনে করছেন সঠিক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন মমতা। ৪৯ শতাংশ মনে করছেন সঠিক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন অমিত শাহ। ৮ শতাংশ মনে করছেন দুজনের মন্তব্যই বিভ্রান্তিকর। ১০ শতাংশ বলেছেন তাঁরা এর উত্তর বলতে পারবেন না।
'CAA' কার্যকর হওয়ায় সংখ্য়াগরিষ্ঠ মতুয়ারা কাকে ভোট দেবে?
৪৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন মতুয়ারা ভোট দেবেন বিজেপিকে। ৩১ শতাংশ বলেছেন সিএএ কার্যকর হলে মতুয়ারা তৃণমূলকে ভোট দেবেন, ৭ শতাংশ বলেছেন বাম-কংগ্রেস জোট ভোট পাবে। ১৫ শতাংশ মানুষ বলতে চাননি।
অর্জুন সিং-তাপস রায়-দিব্য়েন্দু অধিকারীর মতো নেতারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায়, লোকসভা ভোটে কি তৃণমূলের ক্ষতি হবে?
৪১ শতাংশ মানুষ মনে করছেন - হ্যাঁ। ৪১ শতাংশ মানুষ মনে করছেন - না। ১৮ শতাংশ জানিয়েছেন - বলতে পারব না।
সন্দেশখালিকাণ্ড কি লোকসভা ভোটে বাংলায় প্রধান ইস্য়ু হয়ে উঠবে?
৪৮ শতাংশ মনে করছেন, হ্যাঁ, সন্দেশখালিকাণ্ড এই নির্বাচনের বড় ইস্যু হয়ে উঠবে। ৩৩ শতাংশ মনে করছেন, তা নয়। মুখ খুলতে চাননি ১৯ শতাংশ।
সন্দেশখালিকাণ্ডের ফলে কি লোকসভা ভোটে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের মহিলা ভোটব্য়াঙ্কে ভাঙন ধরবে?
সন্দেশখালির ঘটনা তৃণমূলের মহিলা ভোটব্যাঙ্কের ফাটল ধরাবে বলে মনে করছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ মানুষ। আর ৩৭ শতাংশ মানুষ মনে করছেন এর ফলে ভোট ব্যাঙ্কে কোনও প্রভাব পড়বে না তৃণমূলের। অন্যদিকে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবে না জানিয়েছেন ১২ শতাংশ মানুষ।
সন্দেশখালিকাণ্ডের ফলে লোকসভা ভোটে লাভবান হবে কোন দল ?
লোকসভা ভোটে সন্দেশখালিকাণ্ডকে বড় ইস্যু হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলি, যার অভিঘাত রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছেছিল রাজধানী শহরেও। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৫০ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, বিজেপি এই ইস্যু থেকে লাভবান হবে ভোটের ময়দানে। ২৫ শতাংশ মনে করছেন লাভ তুলবে তৃণমূল কংগ্রেস। ৯ শতাংশ ভাবছেন, বামেরাই এই ইস্যুর পরে জনতার আস্থা পাবে। ১৬ শতাং বলেছেন, বলতে পারব না।
'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পের টাকা দ্বিগুণ হওয়ায় লোকসভা ভোটে কি তৃণমূল লাভবান হবে ?
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন ৫০ শতাংশ মানুষই মনে করছেন তৃণমূল এতে স্পষ্ট লাভবান হবে। ৩৭ শতাংশ মানুষ মনে করছেন তা হবে না। ১৩ শতাংশ মানুষ বলতে চাননি।
শুভেন্দু অধিকারী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বিজেপি রাজ্য়ে ক্ষমতায় এলে ৩ গুণ বাড়িয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুদান ৩ হাজার টাকা করা হবে। এই প্রতিশ্রুতি কি লোকসভা ভোটে বিজেপিকে ডিভিডেন্ড দেবে?
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন ৪০ শতাংশ মানুষই মনে করছেন এই প্রতিশ্রুতি বিজেপিকে ডিভিডেন্ড দেবে। ৫০ শতাংশ মানুষ তা মনে করছেন না। আর ১০ শতাংশ মানুষ উত্তরই দিতে চাননি।
বিচারপতির পদে ইস্তফা দিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ায় কি লোকসভা ভোটে বিজেপির লাভ হবে?
বিজেপির লাভ হবে বলেই মনে করছেন ৪৭ শতাংশ মানুষ। ৪২ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, না এতে বিজেপির বিশেষ লাভ হবে না। আর ১১ শতাংশ মানুষ উত্তর দিতেই চাননি।
বিচারপতির পদ ছেড়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক?
সঠিক বলেই মনে করছেন ৪২ শতাংশ । সঠিক মনে করছেন না ৪৫ শতাংশ মানুষ। বলতে পারব না , বলছেন ১৩ শতাংশ মানুষ।
একঝাঁক তরুণ মুখকে প্রার্থী করে কি লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে খাতা খুলতে পারবে সিপিএম?
এই প্রশ্নের উত্তরে সি ভোটারের সমীক্ষায় ৩০ শতাংশ মানুষ মনে করেছেন তরুণ মুখকে প্রার্থী করেই বাংলায় খাতা খুলতে পারবে বামেরা। ৫২ শতাংশ অবশ্য মনে করছেন এই তরুণ ব্রিগেডকে প্রার্থী করে লোকসভা নির্বাচনে ফলাফলে খাতা খুলতে পারবে না লাল ব্রিগেড, ১৮ শতাংশ মনে করছেন তাঁরা উত্তর দিতে পারবে না।
'মোদির গ্য়ারান্টি' না 'মমতার গ্য়ারান্টি'-লোকসভা ভোটে কার উপর মানুষ বেশি ভরসা করবে?
সি ভোটারের সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪২ শতাংশ মনে করছেন মোদির গ্যারান্টির উপর মানুষ বেশি করবে। ৩৫ শতাংশ মনে করছেন মমতার গ্যারান্টির উপর ভরসা করবে বঙ্গবাসী। ১৪ শতাংশ মনে করছে কারও গ্যারান্টি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ৯ শতাংশ মানুষ বলতে পারব না, জানিয়েছেন এমনটাই।
রাম মন্দিরের উদ্বোধনের ফলে কি বাংলায় লোকসভা ভোটে বিজেপির বাড়তি সুবিধা হবে?
সি ভোটারের সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করছেন লোকসভা ভোটে রাম মন্দিরের উদ্বোধন বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা দেবে। ৪৩ শতাংশ মনে করছেন রাম মন্দিরকে ইস্যু করে বিজেপি বাড়তি সুবিধা পাবে না। ৯ শতাংশ উত্তর দিতে পারেননি।
ভোটের আগে তেল-গ্য়াসের দাম কমিয়ে বিজেপি কি ভোটে ফায়দা তুলতে পারবে?
লোকসভা নির্বাচনের আগে তেল ও গ্যাসের দাম কমিয়েছে মোদি সরকার। সেই প্রভাব কি ভোট বাক্সে পড়বে? সি ভোটারের সমীক্ষায় ৪২ শতাংশ জানিয়েছে প্রভাব পড়তে পারে। ৪৫ শতাংশ বলেছেন বিজেপি এভাবে ভোটে ফায়দা তুলতে পারবে না, ১৩ শতাংশ বলতে পারবে না, এমনটাই জানিয়েছে।
বিজেপি দাবি করছে, লোকসভা ভোটে বাংলায় তারা এতটাই ভাল ফল করবে যে ২০২৬ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের সরকার টিকবে না। আপনি কি সহমত?
সি ভোটারের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিজেপির এই দাবির সঙ্গে সহমত ৪০ শতাংশ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী। ৪৭ শতাংশ এই মতের সঙ্গে সহমত নন। ১৩ শতাংশ জানিয়েছেন, 'বলতে পারব না'
দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আপনি কাকে দেখতে চান?
এই প্রশ্নের উত্তর নির্বাচনী ফলাফলে জানা যাবে তা অবশ্যম্ভাবী। তবে সি ভোটারের সমীক্ষায় কোন নেতা এগিয়ে? রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫২ শতাংশ চাইছেন দিল্লির মসনদে ফিরুন নরেন্দ্র মোদি, ১৯ শতাংশ চাইছেন রাহুল গাঁধীকে, ১৮ শতাংশ দেখতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, ২ শতাংশ চাইছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে, ৩ শতাংশ এঁদের মধ্যে কারওকেই চাইছেন না, ৬ শতাংশ উত্তর দিতে পারেননি।
ডিসক্লেমার: সি ভোটারের সমীক্ষা সম্পূর্ণ রূপে সঠিক প্রমাণিত হয়, কখনও আংশিক আবার কখনও আসল ফলের ঠিক উল্টোটাও হয়। তাই এই সমীক্ষায় ফল যাই হোক না কেন তাকে ধ্রুবসত্য মনে করার কোনও কারণ নেই। সি ভোটারের এই সমীক্ষার সঙ্গে সম্পাদকীয় নীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সমীক্ষক সংস্থার দেওয়া তথ্যগুলো পাঠকদের সামনে তুলে ধরি মাত্র।