কলকাতা: আর মাত্র সপ্তাহখানেক, তার পরে দেশজুড়ে শুরু হয়ে যাবে লোকসভা ভোট। এবার কাকে ক্ষমতায় আনবেন মানুষ? সেটা জানা যাবে ৪ জুন। তার আগে অবশ্য এই রাজ্যের বাসিন্দাদের মনোভাবের আঁচ পেতে  সমীক্ষা চালিয়েছিল এবিপি সি-ভোটার। সমীক্ষা চলে গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। ১ লক্ষ ১১ হাজার ২৫৬ জনের সঙ্গে কথা বলেন সমীক্ষকরা। সেখান থেকে কী উঠে এল? দেখে নেব, পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ আসনের সম্ভাব্য ফলাফল। তবে একটি কথা মনে রাখা জরুরি। জনমত সমীক্ষার ফলাফল কখনও মেলে, কখনও মেলে। কারণ গণতন্ত্রে মানুষের ভোটই শেষ কথা বলে। এই সমীক্ষা শুধু সেই মনোভাবের একটি আঁচ মাত্র, যার উপর ভিত্তি করে ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। 


মালদা উত্তর: এই লোকসভা কেন্দ্রে তৃতীয় দফা অর্থাৎ ৭ মে ভোট। এখানে বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু, তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কংগ্রেসের চিহ্নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোস্তাক আলম। এবিপি সি ভোটার সমীক্ষা বলছে, ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে তাতে মালদা উত্তর কেন্দ্রে সম্ভাব্য জয়ী বিজেপির খগেন মুর্মু।


বসিরহাট: সন্দেশখালিতে টানা অশান্তির জেরে দক্ষিণবঙ্গের এই লোকসভা কেন্দ্র শিরোনামে গত কয়েক মাস ধরে। এমনকি বিজেপি, সন্দেশখালির প্রতিবাদিনীদের 'প্রতিনিধি' রেখা পাত্রকে প্রার্থী করলে তা নিয়ে তীব্র বিতর্কও হয়। অন্য দিকে তৃণমূলের হয় এবার ভোটে দাঁড়িয়েছে হাজি নুরুল ইসলাম। নিরাপদ সর্দার লড়ছেন বামেদের হয়ে, প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফও। আখতার রহমান বিশ্বাস তাদের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আগামী ১ জুন এখানে ভোট। এবিপি সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, এই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। মাত্র ১ শতাংশ ভোট 'স্যুইং' হলে ফলাফল পাল্টে যেতে পারে, ইঙ্গিত সমীক্ষায়। তবে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যা হিসেব, তাতে হাজি নুরুল ইসলামের জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন সমীক্ষকরা।


জলপাইগুড়ি: এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়ের জন্য জনসভা করে গিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্য দিকে, তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় পরিচিত মুখ। আর বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী দেবরাজ বর্মনও প্রচারে খামতি রাখছেন না। উত্তরবঙ্গের এই লোকসভা আসনে, আগামী ১৯ এপ্রিল অর্থাৎ প্রথম দফাতেই ভোট। এবিপি সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত এতে সম্ভাব্য জয়ী বিজেপির জয়ন্ত রায়।


শ্রীরামপুর: দক্ষিণবঙ্গের এই কেন্দ্রে ভোট হওয়ার কথা পঞ্চম দফা অর্থাৎ ২০ মে। এখানে বিজেপির প্রতীকে লড়ছেন কবীরশঙ্কর বসু। তৃণমূল প্রার্থী করেছে তাদের পুরনো সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বামেরা আবার আস্থা রেখেছে তরুণ নেত্রী দীপ্সিতা ধরের উপর। আইএসএফের প্রতীকে লড়ছেন শাহরিয়ার মল্লিক। এবিপি সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী,  শ্রীরামপুরে সম্ভাব্য জয়ী তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।


বর্ধমান দুর্গাপুর: গত কয়েক দিন ধরে প্রায় নিয়মিত শিরোনামে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনটি। এখানে প্রার্থী করা হয়েছে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। নিজের পুরনো কেন্দ্র মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে এখানে নিয়ে আসায় তিনি যে অসন্তুষ্ট, সেটা প্রথমে গোপন করেননি। তবে প্রচারে খামতিও রাখছেন না। তাঁর উল্টো দিকে প্রার্থী হয়েছেন কীর্তি আজাদ। বামেদের তরফে লড়ছেন বর্ধমান মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুকৃতি ঘোষাল। এখানে ভোট ১৩ মে, অর্থাৎ চতুর্থ দফায়। এবিপি সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার কথা। ১ শতাংশ ভোট 'স্যুইং' হলে পাল্টে যেতে পারে ফলাফল। না হলে আপাতত এগিয়ে  দিলীপ ঘোষ, ইঙ্গিত সমীক্ষায়। 


দু'কথা...
কয়েকটি বিষয় মনে রাখা দরকার। প্রথমত, এই সমীক্ষার সঙ্গে আমাদের এডিটোরিয়াল পলিসির কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের জার্নালিস্টিক জাজমেন্টেরও কোনও জায়গাই নেই এখানে। সমীক্ষক সংস্থার দেওয়া সংখ্যাগুলো আমরা হুবহু সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরি মাত্র। কুড়ি বছর ধরে এই সমীক্ষা হয়ে আসছে। বহুবার মিলেছে, বহুবার মেলেনি। সমীক্ষা কখনও একশোয় একশো পেয়েছে, কখনও শূন্য পেয়েছে। কারণ সমীক্ষা কোনও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎবাণী নয়। তাই একে ধ্রুবসত্য মনে করে উচ্ছ্বসিত, বা হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। এটা, মানুষ কী ভাবছেন, তার একটা আভাস পাওয়ার চেষ্টা মাত্র। কারণ সমীক্ষাই যদি ধ্রুবসত্য হত, তাহলে তো আর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ভোট করার দরকারই পড়ত না। আর সি ভোটারের এই সমীক্ষা যখন চলেছে, তখন অনেক দলেরই প্রার্থী ঘোষণা হয়নি, হেভিওয়েটদের ঝোড়ো প্রচারও তুঙ্গে ওঠেনি। 
এই সমীক্ষার জন্য সি ভোটারের সমীক্ষকরা, রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রকে তিনটে ভাগে ভাগ করেছেন। কোনও দল, কোনও কেন্দ্রে, একেবারে স্পষ্টভাবে এগিয়ে থাকলে, সমীক্ষকরা তাকে বলছেন, Clear Winner, আমরা বলছি 'সম্ভাব্য জয়ী।' আবার জোর টক্কর হচ্ছে বেশ কিছু কেন্দ্রে, যেখানে তিন শতাংশ ভোটের স্যুইং হলে, সম্ভাব্য ফল মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে। আবার কিছু কেন্দ্রে টক্কর একেবারে হাড্ডাহাড্ডি, যেখানে মাত্র এক শতাংশ ভোটের স্যুইং, সম্ভাব্য ফল উল্টে দিতে পারে। কে জিতবে, কে হারবে, তা বোঝা যাবে ৪ জুনই, ফলপ্রকাশের পর। 


আরও পড়ুন:রাজ্যের ৪২ আসনে কে কোথায় এগিয়ে? কী বলছে এবিপি সি ভোটার সমীক্ষা? একনজরে সব আপডেট