কলকাতা: ক্রিকেটের বাইশ গজে ব্যাট হাতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। রাজনীতির ময়দানে নেমে প্রথম সুযোগেই ছক্কা হাঁকালেন। বিধানসভা নির্বাচনে হাওড়ার শিবপুর কেন্দ্রে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৩২৬০৩ ভোটে হারিয়ে বিধায়ক হলেন একসময় জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটার, বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি। বিধায়ক হিসাবে স্টান্স নেওয়ার আগে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিলেন এবিপি লাইভ-কে।


প্রশ্ন: বিধায়ক হিসাবে নতুন ইনিংস, নতুন দায়িত্ব। এত মানুষের ভালবাসা, জনসমর্থন, কীভাবে দেখছেন গোটা ব্যাপারটা?


মনোজ তিওয়ারি: মানুষ আমাকে বিশ্বাস করেছেন। সেই বিশ্বাসের মূল্য যেন কাজের মাধ্যমে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পারি, সেই চেষ্টাই করব। মানুষের জন্যই মাঠে নেমেছি। তাঁদের জন্যই মাঠে পড়ে থাকব। কাজ করব। ভোটের আগে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেগুলো পূর্ণ করব।



প্রশ্ন: ক্রিকেট মাঠে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছেন। এবার রাজনীতির ময়দানে জিতলেন। এই জয়ের অনুভূতিটা কেমন?


মনোজ: রাজনীতির চেয়ে খেলার মাঠের জয়ের অনুভূতিটা অনেক ভাল ছিল। কারণ তখন পরিস্থিতি আলাদা ছিল। ভারতীয় দলে জায়গা পাকা ছিল না। যখনই সুযোগ হতো, নিজের সেরাটা দিতাম। কখনও চার-পাঁচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছি, কখনও ওপেন করতে বলা হয়েছে। তখন অনেক বেশি অনিশ্চয়তা ছিল। পারব কী পারব না, সেই সংশয় ছিল। সেঞ্চুরি করার পর মনে হয়েছিল, আমিও পারি সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফল হতে। সেই আনন্দটা তো আলাদা। ২০-২১ বছর ধরে খেলে যাচ্ছি ক্রিকেট। ছোটবেলা থেকে বাইশ গজে। রাজনীতিতে সেখানে নতুন। জিতে খুশি। তবে আবেগে ভেসে যাচ্ছি না। জয়টা একটা অংশ ছিল। মানুষ কেন জিতিয়েছেন, সেটা বুঝে গিয়েছি। দেড়মাস ধরে প্রচার করেছি। সকলের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনেছি। অনেক কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সেই অঙ্গীকার পূরণ করতে হবেই, না হলে মুখ দেখাতে পারব না। জিতে খুশি। তবে কোনও উৎসব করছি না। করোনা আবহে কোনও সেলিব্রেশন নেই। বরং কাজে নেমে পড়েছি। তৃণমূল ভবন থেকে দিদির বৈঠক শেষ করে এখন যাচ্ছি শিবপুরে। মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করব। আমাদের ছেলেরা আগে থেকেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। দুটি ওয়ার্ড ইতিমধ্য়েই স্যানিটাইজ করা হয়েছে। দলের ছেলেরা প্রচুর পরিশ্রম করছে। এলাকা স্যানিটাইজ করা থেকে শুরু করে মাস্ক বিতরণ, এগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করব। কারণ, তাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে।



প্রশ্ন: শিবপুরে কী কী কাজ করতে হবে, ভেবে রেখেছেন?


মনোজ: প্রথম লক্ষ্য করোনার বিরুদ্ধে লড়াই। এই ম্যাচটা জিততেই হবে। গোটা দেশকে করোনামুক্ত করতে হবে। আমার বিধানসভা এলাকায় কিছু দায়িত্ব আমার ওপর রয়েছে। সেগুলো পালন করতে হবে। এছাড়া এলাকায় অনেক সমস্যা রয়েছে। যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের প্রয়োজনে রয়েছি। যাঁরা ভোট দেননি, তাঁদের জন্যও রয়েছি। শিবপুর এলাকায় জল নিষ্কাশন নিয়ে সমস্যা রয়েছে। ডোবাগুলো পরিষ্কার করতে হবে। রাস্তাঘাট ঠিক করতে হবে। রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সব কিছু নিয়েই কাজ করতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করব। সেখানে চিকিৎসকেরা সকলের শারীরিক পরীক্ষা করবেন। নতুন শিবপুর গড়ে তুলতে হবে।


প্রশ্ন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ের পর কী বললেন?


মনোজ: জেতার পর এখনও আলাদা করে কথা হয়নি। আজ সকলকে ডেকেছিলেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন। মানুষের পাশে থাকার কথা বলেছেন। নিজে অসম্ভব পরিশ্রম করেছেন। ওই ভাঙা পা নিয়ে প্রচার করেছেন।


প্রশ্ন: ক্রিকেট মাঠের সেঞ্চুরি তো অনেককে উৎসর্গ করেছেন। ব্যাটে ছেলের নাম খোদাই করে ক্রিজে গিয়েছেন। এই জয় কাকে উৎসর্গ করছেন?


মনোজ: শিবপুরের মা, মাটি, মানুষকে উৎসর্গ করব এই জয়। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাোধ্যায়কে উৎসর্গ করব। সমস্ত বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করব। আমাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছেন। আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ মিথ্যে প্রচার চালিয়েছে। কিন্তু মানুষকে ভুল বোঝাতে পারেনি। আমজনতা দিদিকে ভালবাসে। আশীর্বাদ করেছেন। এই জয় দিদিকে, সাধারণ মানুষকে, আমার পরিবার আর অবশ্যই ছেলেকে উৎসর্গ করব।



প্রশ্ন: জয়ের পর খেলার মাঠের তারকারা কেউ অভিনন্দন জানিয়েছেন?


মনোজ: প্রচুর অভিনন্দনবার্তা পেয়েছি। হরভজন সিংহ মেসেজ করেছিল। সুনীল ছেত্রী মেসেজ পাঠিয়েছে। আরও অনেকে।


প্রশ্ন: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়?


মনোজ: জেতার পর কথা হয়নি। তবে রেজাল্ট বেরনোর আগে মেসেজ করেছিল।



প্রশ্ন: ভেবেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস এই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে?


মনোজ: আমার বিশ্বাস ছিল মানুষ ঢেলে ভোট দেবেন। মানুষ তৃণমূলকেই চায়। সেটা বুঝেছি বলেই অন্য দলের প্রস্তাব থাকলেও তৃণমূলেই যোগ দিয়েছি। দিদির পথ অনুসরণ করেছি। মানুষ দুহাত ভরে আশীর্বাদ করেছেন। রেজাল্টেই সেটা স্পষ্ট। বিজেপি শুধু প্রচারই করেছে। সকলে বলছিল, বিজেপির হাওয়া। কত মানুষ ওদের দলে যোগ দিল। আমার বিশ্বাস ছিল তৃণমূলেই। বিজেপি মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। মানুষ আমাদেরই বেছে নিয়েছেন।