রাজীব চৌধুরী, ভরতপুর : এবার সংঘাত-সুর চড়ল সপ্তমে ! জেলা ও ব্লক নেতৃত্বকে তোয়াক্কা না করে ৪৭ জনের পঞ্চায়েত নির্বাচনী কমিটি ঘোষণা করলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর দাবি, সম্প্রতি জেলা সভানেত্রী তাঁকে ব্লক সভাপতির সঙ্গে ২৫-৭৫ শতাংশ অনুপাতে আসন রফা করতে প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া মেলেনি তৃণমূলের জেলা সভানেত্রীর।


ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার দিনই মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের হাতে রক্তাক্ত হয়েছিল তৃণমূলই। প্রকাশ্যে চলে এসেছিল ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর ও ভরতপুর ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমানের দ্বন্দ্ব ! এবার সংঘাত-সুর চড়ল সপ্তমে !
জেলা ও ব্লক নেতৃত্বকে তোয়াক্কা না করে ৪৭ জনের পঞ্চায়েত নির্বাচনী কমিটি ঘোষণা করলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক।

সোমবার থেকেই ভরতপুর ২ নম্বর ব্লকে মনোনয়নের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন হুমায়ুন। তাঁর দাবি, সম্প্রতি জেলা সভানেত্রী
তাঁকে ব্লক সভাপতির সঙ্গে ২৫-৭৫ শতাংশ অনুপাতে আসন রফা করতে প্রস্তাব দেন। এপ্রসঙ্গে হুমায়ুন বলেন, "গিয়ে দেখছি এখানকার বাহাদুর সভাপতি আর ভরতপুরের কয়েকজন সভাপতি যৌথভাবে আছেন। উনি আমাকে বলছেন, পঞ্চায়েতের টিকিট আপনি ২৫% নেন, আর আমরা ৭৫% নেব। কেন ? আপনার তো বুথে বুথে লোকই নেই। আপনার ২৫% নিয়ে আপনি প্রার্থী করতে পারবেন না। আর ওঁর নাকি ৭৫%। আমি সেই বাহাদুরদেরকে বলছি, মনোনয়ন করার শুরু করবেন। আমরাও অংশগ্রহণ করব। কার কত পার্সেন্টেজ আছে, আমরা বিশৃঙ্খলা না করে ...এটা আগামী দিনে সময় কথা বলবে।"

এই কমিটির মাথায় রয়েছেন একদা হুমায়ুন-বিরোধী বলে পরিচিত ভরতপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ আজহারউদ্দিন ওরফে সিজার। যার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন ভরতপুর ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, "কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ আছে যারা শুধু ভোটের রাজনীতিটাই করেন। তাঁরা সারাবছর ৩৬৫ দিন মানুষে সঙ্গে থাকেন না। তাঁরা ঠিক ওঁত পেতে থাকেন, কবে ভোট আসবে। ভোট এলেই তাঁদের বাজারে দেখতে পাওয়া যায়। ভোটে যদি তাঁদের স্বার্থসিদ্ধি হয়, তবে তাঁরা জোড়া ফুলের প্রতীক সম্বলিত দলটা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলটা তাঁরা করেন। যদি তাঁদের স্বার্থসিদ্ধি না হয়, তবে তাঁরা কখনো রাতের অন্ধকারে বা প্রকাশ্যে কখনো শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপি দলটা করেন, কখনো অধীর চৌধুরীর কংগ্রেস দলটা করেন।"  


যদিও টিকিট নিয়ে কোন্দল প্রসঙ্গে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া মেলেনি তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায়ের।
ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার হতেই শনিবার উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী তালিকায় অনুমোদন না দিলে তাঁর অনুগামীরা নির্দল হয়ে দাঁড়াবে।


ইসলামপুরের করিমের পর এবার ভরতপুরের কবীর। কোন্দলে তৃণমূল শিবিরে অস্বস্তি ! এনিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, 'যা মনে করেন তা বলে ফেলেন হুমায়ুন। বাকি চালাক নেতা আছে, তাঁরা বলেন না। তৃণমূলের সর্বত্র এই জিনিসই চলছে। তাঁরা পেছনে একটাই কারণ, তাঁরা জানেন পঞ্চায়েত একবার হাতে না পেলে ৫ বছরে আমি বেকার হয়ে যাব।'

ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই প্রকট হচ্ছে কোন্দল। এর প্রভাব কী পড়বে ভোটবাক্সে ? সেটাই এখন দেখার।