পূর্ব মেদিনীপুর: ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় রাজ্যের পুলিশ। পূর্ব মেদিনীপুরের সভা থেকে তাঁর অভিযোগ, ১৪৪ ধারা জারি করতে বাহিনীর পাশাপাশি রাজ্যের কিছু ভীতু পুলিশকে লাগানো হয়েছে। তৃণমূলনেত্রীর হুঁশিয়ারি, আগামী দিনে এর জন্য ভুগতে হবে। নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে বলেই মমতার চক্ষুশূল পুলিশও। পাল্টা দাবি বিরোধীদের।
এদিন নির্বাচনী জনসভায় মমতা বলেন, ১৪৪ ধারা জারি করতে স্টেটের কিছু ভীতু পুলিশকে কাজে লাগানো হল। জেলা জুড়ে কারফিউ জারি করে দিল। এর ফল ভুগতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশকে নিয়ে। এর রেকর্ড করা আছে। ভোট মিটলে জবাব দেওয়া হবে। আমাদের কিছু ভীরু-দুর্বল লোক আছে। চিনিয়ে দিচ্ছে তৃণমূলের লোক, পার্টি অফিস।
সল্টলেক, কলকাতা-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের তৎ‍পরতায় মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছে। ষষ্ঠদফার ভোট নির্বিঘ্নে করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কলকাতা পুলিশের অফিসাররা। বহিরাগত দেখলেই লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাওয়া, ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি, সাঁজোয়া গাড়িতে রাস্তায় কম্যান্ডোদের টহল। এ সব ছবি দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে, পুলিশ হো তো অ্যায়সা! এমনকী, নতুন পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশ যেভাবে মেরুদণ্ড সোজা রেখে কাজ করেছে, তাতে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছে নির্বাচন কমিশনও।




নির্বাচন কমিশন যখন পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছে, তখন তৃণমূলনেত্রীর গলায় সেই পুলিশের উদ্দেশেই নাম না করে হুঁশিয়ারি। তৃণমূলনেত্রী বলেন, কেউ যদি ভাবে ১৫ দিন দায়িত্ব পেয়ে সোনার মুকুট পরবে, ভুল করবে। যারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করল তাদের রেকর্ড রেখেছি। যারা করেনি, তাদেরও রেকর্ড রেখেছি। যারা করল ভুগতে হবে।
অনেকে বলছেন, তৃণমূলনেত্রী বোধহয় বুঝতে পারেননি, পুলিশকর্তা বদলে গোটা পুলিশের চেহারাটা রাতারাতি এরকমভাবে বদলে যেতে পারে! কয়েকদিন আগে কমিশন যখন একাধিক পুলিশকর্তাকে বদলি করে, তখনও তাঁর গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গিয়েছিল। মমতা বলেছিলেন, যে যাবে সেও আমার লোক। যে আসবে সেও আমার লোক। মাইন্ডসেট চেঞ্জ করবে কীভাবে!

বিরোধীদের কটাক্ষ, এই ধারণা ভেঙে, নিরপেক্ষভাবে কাজ শুরু করতেই তৃণমূলনেত্রীর চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন উর্দিধারীরা। বিরোধীদের প্রশ্ন, পুলিশ ঠিকমতো কাজ করাতেই কি ক্ষুব্ধ তৃণমূলনেত্রী? তাই, যে পুলিশ মেরুদণ্ড সোজা রেখে, নিরপেক্ষ ভাবে ভোট করাল, তাদেরকেই এখন তিনি ভীতু বলে দেগে দিচ্ছেন?



পুলিশের পাশাপাশি এদিন ফের বিজেপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করার অভিযোগে সুর চড়ান তৃণমূলনেত্রী। বলেন, পাঁচটা জায়গায় বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট লুঠ করিয়েছে। পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপিও। সিপিএম-কংগ্রেসের অবশ্য দাবি, তৃণমূল-বিজেপির পরস্পরের বিরুদ্ধে এই আক্রমণ পুরোটাই লোক-দেখানো। তাদের এ-ও প্রশ্ন, পুলিশ ও বাহিনী মিলে কঠোরভাবে ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করায় মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারছে বলেই কি চাপে পড়ে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তাই কি রাজ্য পুলিশও এখন তাঁর চক্ষুশূল?

বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলনেত্রী চাপে যে পড়েছেন, তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। যেখানে মমতা বলেছেন, পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর তাণ্ডবে তিনদিন ঘুমোতে পারিনি। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছে, আসলে, পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করায় সাধারণ মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারছে। আর তাতেই ঘুম ছুটেছে তৃণমূলনেত্রীর। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রচারে গিয়ে তৃণমূলনেত্রী অভিযোগ করেন, নির্বাচনে এত নির্যাতন তিনি আগে দেখেননি! বলেন, অনেক নির্বাচন দেখেছি...নির্বাচনে এত নির্যাতন আগে দেখিনি।



তৃণমূলনেত্রীর এই দাবি শুনে শুধু বিরোধী দলের নেতারা নন, হতবাক বিদ্বজ্জনরাও। তাদের প্রশ্ন, কয়েক মাস আগের, বিধাননগর পুরভোটের কথা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুলে গেলেন? সেদিন তো সল্টলেকে ভোটে ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছিল। এবারই বরং সেই সল্টলেকে মানুষ সকাল থেকে ভোট দিয়েছে। কলকাতার ভোটাররাও নিজেদের ভোট নিজেরা দিতে পেরেছেন। তারপরেও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে কী করে? তা হলে বিধাননগরের পুরভোটে কী হয়েছিল? প্রশ্ন অনেকেরই।

ষষ্ঠ দফার আগে ক্লাবগুলির উপর কড়া নজরদারির নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। এর পরদিনই দক্ষিণ কলকাতার একাধিক ক্লাবে হানা দিয়ে বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। ভোটের দিনও তারা বিভিন্ন ক্লাবে তালা ঝুলিয়ে দেয়। একই তৎ‍পরতা দেখা গিয়েছে মমতার বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরেও। এ নিয়েও এদিন ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূলনেত্রী।
বিরোধীদের কটাক্ষ, এই রাগের কারণ তো স্পষ্ট! রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ বকেয়া রেখে করের টাকায় ক্লাবগুলিকে কয়েকশো কোটি খয়রাতি দিয়েছে মমতা-সরকার। যাতে ভোটে তাদের কাজে লাগানো যায়। কিন্তু, ভোটের সময়, সেই সব ক্লাবে পুলিশ তালা ঝুলিয়ে দিলে তৃণমূলনেত্রী ক্ষুব্ধ তো হবেনই!