কলকাতা : লোকসভা ভোটের মধ্যেই প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। এই ইস্যুতে শাসক-বিরোধী উভয়পক্ষই একে অপরকে নিশানা করছে। গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বিজেপির বিচারালয়' আক্রমণের আজ জবাব দিলেন অমিত শাহ। দলীয় সভায় উপস্থিত মহিলা কর্মী-সমর্থকদের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়লেন, 'ভাই-ছেলেদের চাকরি দেওয়ানোর জন্য আপনাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা আছে ?'


২০১৬ সালের SSC-তে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির বিশেষ বেঞ্চ। গোটা প্যানেলটাই বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্ট। শুধু তা-ই নয়, সুপার নিউমেরারি পোস্ট বা অতিরিক্ত শূন্য়পদ প্রসঙ্গে রাজ্য়ের মন্ত্রিসভার ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলেছে আদালত। আর এরপরই, বিচারব্য়বস্থার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্কের অভিযোগ করে কড়া আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। গতকাল চাকুলিয়ার সভায় তিনি বলেন, "এটা বিচারপতিদের দোষ নয়। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের দোষ। তারা বিজেপির লোক দেখিয়ে দেখিয়ে এখানে বসিয়েছে। যাতে তারা বিজেপির পার্টি অফিস থেকে যা বলে দেয়, সেই ড্রাফট তাঁরা করে দেন। "


মমতার সেই বক্তব্যের এদিন পাল্টা জবাব দিলেন অমিত শাহ। তাঁর প্রশ্ন, "বিজেপির ষড়যন্ত্র কোথায় ? এটা হাইকোর্টের আদেশ।" তিনি বলেন, "মমতাদির এটা নিয়ে নিজের চিন্তা করা উচিত যে চাকরি নিয়ে যেভাবে লাগামহীন দুর্নীতি হয়েছে , তারজন্যই হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। আর হাইকোর্টের এই পদক্ষেপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মুখোশ খুলে দিয়েছে। " 


আদালতের ঐতিহাসিক রায়ে ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বিচারব্য়বস্থাকে কড়া আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, "বিজেপির একটা কথায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা কাজ করছেন, তাঁদের বলছে কিনা ৮ বছরের বেতন-সহ ৪ সপ্তাহের মধ্যে ফেরত দাও, সুদ-সহ। পারে তাঁরা দিতে ? তাঁদের অপরাধ কী তাঁরা জানলেন না।"


মঙ্গলবার, ইংরেজবাজারে প্রচারে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই আক্রমণের জবাব দিলেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, "কালই ৫০ হাজার (পড়ুন ২৫ হাজার ৭৫৩ ) চাকরি হাইকোর্ট সাসপেন্ড করেছে। কেন করেছে ? ১০ লাখ, ১৫ লাখ, চাকরির জন্য ঘুষ নিত। মা-বোনেরা, আপনাদের কাছে ভাই-ছেলেদের চাকরি দেওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা আছে ? আছে কি ? নেই। তাহলে তাঁরা চাকরি কীভাবে পাবেন ?"


এদিকে সোমবারে পর মঙ্গলবারও হাইকোর্টের রায় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের সভা থেকে তিনি বলেন, "যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৮ বছর ধরে স্কুলে চাকরি করছেন, তাঁদের সামাজিক সম্মান হয়নি ? যাঁরা স্কুলে পড়ান কোথায় যাবেন ? স্কুলে মাস্টার কোথা থেকে আসবে ? স্কুলে বাচ্চারা গিয়ে বসে থাকবে। ওখানে বিজেপির লোকেরা গিয়ে পড়াবে ? না RSS পড়াবে ? জিজ্ঞেস করুন, বোমা ফাটিয়েছে বোমা। মানুষের চাকরি খেয়ে বোমা, ওই বোমা হজম হলে হয়।"  


সব মিলিয়ে তুঙ্গে উঠেছে বিতর্ক।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।