কলকাতা: বর্ধমান জেলার বেশ কিছুটা অংশ নিয়ে তৈরি বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র। এবারের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে একেবারে জমজমাট লড়াই। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে এই কেন্দ্রে এবার প্রার্থী করেছে বিজেপি। আর উল্টোদিকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে। এই কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী সুকৃতি ঘোষাল। এবারের লোকসভা নির্বাচন চার দফায় হচ্ছে। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে চতুর্থ দফায় অর্থাৎ ১৩ মে ভোট। আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে ২০০৯ সালে  তৈরি হয়েছিল এই কেন্দ্র।


এই লোকসভা কেন্দ্রে শহর এবং গ্রাম- দুইই রয়েছে। লোকসংখ্যার বিচারে শহুরে ও গ্রামীণ ভোটার দুইই রয়েছে এই কেন্দ্রে। শহুরে ভোটার ৪৫ শতাংশের আশেপাশে, বাকিরা গ্রামীণ এলাকার ভোটার। এই কেন্দ্রে মোট ভোটারের মধ্যে ২৪ শতাংশের আশেপাশে তফসিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত। তফসিলি জনজাতির অন্তর্ভুক্ত ৫ শতাংশের আশেপাশে।


বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে কোন কোন বিধানসভা কেন্দ্র?
বর্ধমান দক্ষিণ, মন্তেশ্বর, বর্ধমান উত্তর, ভাতার, গলসি, দুর্গাপুর পূর্ব, দুর্গাপুর পশ্চিম।


লোকসভা নির্বাচন ২০০৯:
২০০৯ সালে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন সিপিএমের শেখ সাইদুল হক। ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে কংগ্রেসের নার্গিস বেগমকে হারিয়েছিলেন তিনি। সেই বার বিজেপি মাত্র সাড়ে চার শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন। সেই সাইদুল হকের ঝুলিতে গিয়েছিল ৫৭৩,৩৯৯ টি ভোট। যা শতাংশের বিচারে ৫০.৫ শতাংশ। কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট প্রার্থী নার্গিস বেগমের ঝুলিতে গিয়েছিল ৪৬৫১৬২টি ভোট, শতাংশের বিচারে যা ৪০.৯ শতাংশ।


লোকসভা নির্বাচন ২০১৪:
এবারের নির্বাচনেই ছবিটা পাল্টে যায়। ইতিমধ্যে ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল হয়ে গিয়েছে। তারপর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি সিপিএমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। ভোট শতাংশেও অনেকটা পিছিয়ে পড়ে বামেরা। ওই আসনে সিপিএমের সাংসদ শেখ সাইদুল হককে হারান তৃণমূলের মমতাজ সঙ্ঘমিত্রা। তৃণমূলের প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫৫৪,৫২১ টি ভোট পেয়েছিলেন। শতাংশের বিচারে যা ৪১.৯ শতাংশ। সিপিএমের শেখ সাইদুল হক পেয়েছিলেন ৪৪৭,১৯০ টি ভোট, শতাংশের বিচারে যা ৩৩.৬ শতাংশ। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। কিন্তু ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে অনেকটা উঠে এসেছিল।  প্রায় ১৮ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। 


লোকসভা নির্বাচন ২০১৯:
এই বছর এই লোকসভা আসন দখল করেছিল বিজেপি। পদ্মশিবিরের এসএস অহলুওয়ালিয়া হারিয়েছিলেন আগেরবারের বিজয়ী তৃণমূলের মমতাজ সঙ্ঘমিত্রাকে। যদিও ভোটের ব্য়বধান খুবই সামান্য ছিল। ওই ভোটে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫৯৮,৩৭৬ টি ভোট, যা শতাংশের বিচারে ৪১.৮। তৃণমূলের মমতাজ সঙ্ঘমিত্রা পেয়েছিলেন ৫৯৫,৯৩৭ টি ভোট- শতাংশের বিচারে যা ৪১.৬। তৃতীয় স্থানে ছিলেন সিপিএমের আভাস রায় চৌধুরী- তিনি পেয়েছিলেন ১১.৩ শতাংশ ভোট।


বিধানসভা ভোট ২০২১:
গত বিধানসভা নির্বাচনে এই লোকসভার অধীনে থাকায় সাতটি বিধানসভা আসনের ৬টিতেই জিতেছিল তৃণমূল। মাত্র একটিতে ফুটেছিল পদ্মফুল।
বর্ধমান দক্ষিণ (TMC), মন্তেশ্বর (TMC), বর্ধমান উত্তর (TMC), ভাতার (TMC), গলসি (TMC), দুর্গাপুর পূর্ব (TMC), দুর্গাপুর পশ্চিম (BJP)।


সি ভোটার ওপিনিয়ন পোল:
ওপিনিয়ন পোলে যে তথ্য় উঠে এসেছে তাতে দেখা গিয়েছে এই আসনে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এবিপি সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী মাত্র ১ শতাংশ ভোট স্যুইং হলেই পাল্টে যেতে পারে ফলাফল। না হলে আপাতত এগিয়ে বিজেপির দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।


২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচন থেকে দেখলে দেখা যায় এই কেন্দ্রে প্রতিবার সাংসদ পাল্টে গিয়েছে। আলাদা আলাদা দলের সাংসদ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ২০০৯ -এর নির্বাচন থেকে যিনি একবার জিতেছেন তিনি পরেরবার হেরে গিয়েছেন। গতবার এই কেন্দ্রে জিতেছিলেন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। এবার তিনি লড়ছেন আসানসোল কেন্দ্র থেকে। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী দিলীপ ঘোষ কি বিজেপির জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবেন? না কি এবার অন্য কোনওরকম ফল হবে? উত্তর মিলবে ৪ জুন। 


তথ্যসূত্র:
elections24.eci.gov.in
old.eci.gov.in
chanakyya.com
indiavotes.com


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: প্রথমবার UPSC দিয়েই সারা ভারতে ব়্যাঙ্ক ৯৪, কীভাবে সফল হলেন তমালি?