সৌভিক মজুমদার, শিবাশিস মৌলিক ও অনির্বাণ বাগচী, কলকাতা : আপনারা নিশ্চয়ই কিছু একটা মূল্যায়ন করেই ছশো আটানব্বইটা বুথে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কীসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিলেন? এভাবেই বুধবার রাজ্য় নির্বাচন কমিশনকে ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেন, আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল কমিশনের। 


গ্রাম বাংলার ভোটে জ্বলছে আগুন। ফাটছে বোমা। মরছে মানুষ।  এই অবস্থায়, ভোট অশান্তি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হলফনামা চাওয়ার আবেদন জানান মামলাকারী। অপর এক মামলাকারী অভিযোগ করেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করে, ৫০ হাজার বুথে ফের ভোটগ্রহণ করা হোক।


কমিশনের ভূমিকার ভর্ৎসনা


এদিন আদালত, কমিশনের কাছে জানতে চায়, আপনারা নিশ্চয়ই কিছু একটা মূল্যায়ন করেই ৬৯৮টি বুথে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কীসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিলেন?  কমিশনের ভূমিকার ভর্ৎসনা করে আদালতের মন্তব্য, এত ক্ষয়ক্ষতি! পুলিশকর্মী পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন! আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল কমিশনের!
এই সমস্ত মামলার শুনানির সময় কমিশনের ২-৩ জন আধিকারিকের উপস্থিত থাকা উচিত।  এতে কমিশনের অন্য ভাবমূর্তি তৈরি হয় - এই মন্তব্যও করেছেন প্রধান বিচারপতি। উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ যাবতীয় অভিযোগ নিয়ে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।


তথ্য সংরক্ষণের নির্দেশ


পাশাপাশি কমিশনকে, ভোট সংক্রান্ত নথি, ব্যালট এবং সিসিটিভি ফুটেজ-সহ সমস্ত তথ্য সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বললেন, 'বড় জোর ৬০ টা বুথে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। ৬০ হাজারের বেশি বুথে ভোট হয়েছে। আপনারা আমায় দেখান তো কোনও নির্বাচনের পর সাতশোর বেশি এলাকায় রিপোল হয়েছে।' 


তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও, কখনও কলকাতা হাইকোর্টে তো কখনও সুপ্রিমকোর্টে ভর্ৎসিত হতে হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। মনোনয়নের শেষদিনে দক্ষিণ ২৪ ভাঙড়েই প্রাণ যায় তিনজনের।  সেদিনও কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আমি কমিশনকে উপদেশ দেওয়ার জন্য বসে নেই যে, আপনারা উচ্চ আদালতে যান। আপনাদের হাতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।  কিন্তু, আপনারা যদি আমাদের নির্দেশকে কার্যকর না করার মত পরিস্থিতি তৈরি করেন, তাহলে আমরা নিশ্চুপ দর্শক হয়ে বসে থাকব না। আমাদের প্রাথমিক মত আপনারা (নির্বাচন কমিশন) আমাদের নির্দেশকে কার্যকর না করার মত পরিস্থিতি তৈরি করেছেন।' 


এর আগে ISF-এর করা একটি মামলায়, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে একের পর এক প্রশ্নবানে বিদ্ধ করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিন্হা। তিনি জানতে চান, নির্বাচন প্রক্রিয়া কি চলছে? নির্বাচন কমিশনার কি আছেন? রাজ্যপাল তাঁর (রাজীব সিন্হা) জয়েনিং রিপোর্ট ফিরিয়ে দিয়েছেন শুনলাম?  এরপর বিচারপতি অমৃতা সিন্হা আরও বলেন, পঞ্চায়েত ভোটের নামে এসব কী হচ্ছে জানি না। 


এরপর, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাহিনী সংক্রান্ত মামলায়, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বলেন, 'কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথা বলেছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জায়গায় সেই ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করতে পারে। আপনাদের যদি বেশি সময় লাগে, তাহলে আবার কলকাতা হাইকোর্টে সেটা জানাতে পারতেন।'


এই  প্রেক্ষাপটে, এদিন ফের কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে।