উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, মুন্না আগরওয়াল, শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কলকাতা : জারি হয়েছে CAA-র বিজ্ঞপ্তি। লোকসভা ভোটের ( Loksabha Poll ) আগে বিরাট বড় সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেউ কেউ বলছেন লোকসভা ভোটের আগে মোদি-শাহের ( Narendra Modi, Amit Shah )  মাস্টারস্ট্রোক । সত্যিই তাই ? সত্যিই কি সিএএ ( CAA )  চালু করা লোকসভা ভোটে কোনওরকম ডিভিডেন্ড দেবে বিজেপিকে ? দেশজুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যদি কোনও বৈষম্য হয়, সেই জিনিস আমরা মানি না। আর বিজেপি শিবিরের আশ্বাস, সিএএ কার্যকর হলে একজনের কাছ থেকেও নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হবে না। এর মধ্যে মাথাচাড়া দিচ্ছে একটাই প্রশ্ন। বাংলার ভোটারদের মধ্যে  সিএএ কতটা প্রভাব বিস্তার করবে ? কতটা প্রভাবিত হবে ভোটব্যাঙ্ক ? তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলতেই হয়, লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের বড় সিদ্ধান্ত সিএএ চালু করা ।


আইনে পরিণত হওয়ার প্রায় ৪ বছর পর, ভোটের মুখে, সোমবার জারি হয়েছে CAA-র বিজ্ঞপ্তি। এর ফলে, দেশজুড়ে চালু হল নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বা 'CAA'। ২০১৪ সাল থেকেই বারবার বাংলায় এসে নাগরিকত্ব নিয়ে সরব হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা CAA পাস করায় মোদি সরকার। এই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অর্থাৎ হিন্দু , বৌদ্ধ , জৈন, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টানরা যদি ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় নিতে চান, সে ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত। পাল্টা তৃণমূল বারবারই দাবি করেছে, এটা নেহাতই বিজেপির নির্বাচনী গিমিক!


বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, 'বাঙালি হিন্দু যেখানেই ধর্মের জন্য় অত্য়াচারিত হবে পৃথিবীতে, তাদের এই পশ্চিমবঙ্গে আসার অধিকার আছে, কারণ তাদের জন্য়ই পশ্চিমবঙ্গ ডক্টর শ্য়ামাপ্রসাদ মুখার্জি, মেঘনাদ সাহা সহ প্রমুখেরা তৈরি করেছিলেন।' 


উল্টোদিকে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছেন, ' যদি CAA দেখিয়ে, NRC নিয়ে এসে কারও, যাঁরা এখানকার নাগরিক, তাঁদের নাগরিকত্ব ক্যানসেল করা হয়, তা হলে কিন্তু আমরা কেউ চুপ থাকব না। আমরা জোরালভাবে এটার প্রতিবাদ করব। আর CAA এর নাম করেও কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে, এই চালাকিও আমরা করতে দেব না। ' 


ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে যাঁদের নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে তাদের জন্য়ই CAA বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অত্য়ন্ত প্রয়োজনীয় বলে দাবি করে আসছে বিজেপি। প্রায় সাড়ে চার বছর বাদে ভোটের মুখে সোমবার যা চালু হল! আর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ক্ষেত্রে সিএএ বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ফ্য়াক্টর! তার কারণ মতুয়া ভোট! ২০১১ সাল থেকে এই মতুয়া ভোটের সিংহভাগই ছিল তৃণমূলের দখলে। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভায় সেই হিসেব বদলে যায়। বনগাঁ এবং রানাঘাট - মতুয়া অধ্যুষিত ২টি লোকসভা কেন্দ্রই তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজ্যের ১০২টি বিধানসভা কেন্দ্রে মতুয়াদের প্রভাব আছে। বাংলার অন্তত ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মতুয়া ভোট। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি সংরক্ষিত বিধানসভা আসনে তো কার্যত নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেয় মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক। তাই CAA চালু হওয়ার ফলে কি বদলে যেতে পারে বাংলার ভোটের সমীকরণ?


মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় এই প্রশ্ন আগে তুলে এসেছেন, আবারও তুললেন , ' তার মানে কি, এতদিন তারা নাগরিক ছিল না? সেইজন্যই কি মতুয়া ভাইবোনেদের এবং নমঃশুদ্রদের আধারকার্ড বাতিল কার চক্রান্ত হয়েছিল? কেন তাঁদের আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছিল? তার মানে নতুন কিছু করবে, পুরনোটার কোনও গুরুত্ব থাকবে না?' 


পাল্টা সুকান্ত মজুমদারের আশ্বাস, ' মুখ্য়মন্ত্রী বলেছিলেন CAA লাগু হলে তো আপনাদের নাগরিকত্ব চলে যাবে, আর আমরা বলেছিলাম, CAA লাগু হলে আপনাদের নাগরিকত্ব যাবে না, আর এখনও বলছি। কে সত্য়ি কথা বলেছেন, কে মিথ্য়া কথা বলেছেন, সেটা একবার প্রমাণ হয়ে যাক' 


মতুয়া ভোটের জন্য় নরেন্দ্র মোদি  থেকে অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা বারবার ছুটে এসেছেন ঠাকুনগরে মতুয়া ঠাকুর বাড়িতে।
মতুয়া ভোটের জন্য় মতুয়াদের পূণ্য়ভূমি বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে পৌঁছে গেছেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। আবার উল্টোদিকে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ও বারবার মতুয়া ঠাকুরবাড়ির প্রধান বীণাপানী দেবীর সঙ্গে দেখা করা থেকে শুরু করে, নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা তুলে ধরে প্রমাণ করতে চেয়েছেন তিনি মতুয়াদের বন্ধু। শেষ অবধি ভোটে সিএএ কত বড় ফ্য়াক্টর হল, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে ফলাফলে। 


আরও পড়ুন : 


'তোমার ধর্ম আমার ধর্ম বলে লড়াই করে কী লাভ? ' জন্মতিথিতে স্মরণ শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে