দিনহাটা : পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে রাজ্যে বেলাগাম সন্ত্রাস। ফের একজনের মৃত্যু। ফের অশান্ত কোচবিহারের দিনহাটা। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কোচবিহারের দিনহাটায় মৃত্যু । তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে গুলি চলার অভিযোগ । ৬ জন তৃণমূল কর্মী জখম হয়েছেন বলে দাবি। ৬ জন আহতর মধ্যে ১ তৃণমূলকর্মীর মৃত্যু। বাকি আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গোটা ঘটনায় ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে।


পঞ্চায়েত ভোট পর্বের শুরু থেকেই একের পর এক ঘটনায় উত্তপ্ত কোচবিহার। তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে। এবার কোচবিহারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার শুরুর পরের দিনই দিনহাটায় খুনের ঘটনা ঘটল। সীমান্তবর্তী জারি ধরলা গ্রামে সংঘর্ষে জড়াল বিজেপি ও তৃণমূল। ঘটনার জেরে গীতালদহে বাবু হক নামে এক তৃণমূলকর্মীর গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। আরও পাঁচজন আহত বলে দাবি তৃণমূলের। তাঁদের দিনহাটা মহকুমা হাসপাতাল ও MJN হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এনিয়ে রাজ্যে গত ১৯ দিনে ১১ জন পঞ্চায়েত-হিংসার বলি হল। দিনহাটার ঘটনায় পুলিশের দাবি, বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতী এনে গন্ডগোল করেছেন স্থানীয় নেতারা।


এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে নিশানা করেছেন সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বর্মা বাসুনিয়া। তাঁর দাবি, গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভেটাগুড়িতে নিজের বাড়িতে ফিরেই বিজেপি কর্মীদের উস্কানি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বিজেপির প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। 


পরিসংখ্যান বলছে, কোচবিহারে পঞ্চায়েতের মোট আসন ২ হাজার ৫০৭টি। এর মধ্যে ভোটের আগেই ১৫৭-টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এই ১৫৭টি আসনের মধ্যে ৮০টিই দিনহাটায়। অর্থাৎ তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহর দিনহাটায় ৫০ শতাংশের বেশি আসন বিনা যুদ্ধেই দখল করেছে তৃণমূল। এর আগে  ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলায় ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় তৃণমূল। বিনা যুদ্ধে ভোটে জেতার স্বাদ আগেও পেয়েছে তৃণমূল। ২০১৮-র ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে ২০২৩-এও।


এর মধ্যেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহর একটি ফেসবুকে পোস্ট ঘিরে তৈরি হয় নতুন বিতর্ক। নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকে ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতকেই বিরোধী শূন্য করার ডাক দেন উদয়ন গুহ। বিরোধী শূন্য ব্লক চাই, ফেসবুকে লেখেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বাকি ৮টিও যাতে বিনা যুদ্ধেই দখল করা যায়, ১২ জন অঞ্চল সভাপতির কাছে সেই দাবি জানান তৃণমূল বিধায়ক। ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই উদয়নের সাফাই, নাতি পরীক্ষা দিলে আমি তো ভাল রেজাল্টই চাইব। বিজেপির কটাক্ষ, এভাবে বিরোধী শূন্য করতে করতে একদিন দিনহাটায় তৃণমূলই শূন্য হয়ে যাবে। 


এদিকে দিনহাটারই ভেটাগুড়িতে নিশীথ প্রামাণিকের এলাকায় বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে দিনকয়েক আগে পথে নামে তৃণমূল। কোচবিহার-দিনহাটা রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন শাসকদলের কর্মীরা। অবরোধ হঠাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে তৃণমূল কর্মীদের। তৃণমূলের অভিযোগ, একাধিক প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয় বিজেপি। গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এক তৃণমূল কর্মীকে অপহরণও করা হয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে পথ অবরোধ।


এই পরিস্থিতিতে গতকাল সাতসকালে দিনহাটায় বিজেপি কর্মীর বাড়ির দুয়ারে বোমা দেখা যায়। দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের পুঁটিমারি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কোয়ালিদহ এলাকায় বিজেপি কর্মী দীপঙ্কর রায়ের বাড়ির সামনে একটি বোমা উদ্ধার হয়। বিজেপির অভিযোগ, ভয় দেখাতে তৃণমূলই বোমা রেখে গিয়েছে।