কলকাতা: দূর দূর পর্যন্ত যখন চোখে পড়ত না গেরুয়া, সেই সময় রাজ্যে পদ্ম ফোটানোর কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত কয়েক বছরে রাজ্য় বিজেপি-তে ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh)। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তিনি টিকিট পাবেন কি না, সেই নিয়েও ধন্দ তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে প্রার্থী করল বিজেপি। তবে মেদিনীপুর নয়, এবার তাঁকে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করল গেরুয়া শিবির। আর মেদিনীপুরে দিলীপের কেন্দ্রে দাঁড় করানো হল, রাজনীতিতে তাঁরই শিষ্যা অগ্নিমিত্রা পালকে। (Agnimitra Paul)


খড়্গপুর সদরের বিধায়ক ছিলেন দিলীপ। ২০১৯ সালে মেদিনীপুরের সাংসদ হন তিনি। সেই সুবাদেই দিলীপকে মেদিনীপুর থেকে আলাদা করা যেত না এতদিন। কিন্তু সেই মেদিনীপুর থেকেই এবার সরানো হল তাঁকে। সেই নিয়ে দিলীপের বক্তব্য, "আমাকে বলা হয়েছিল কেন্দ্রের পরিবর্তন হতে পারে। আমি বলেছিলাম, আট বছর ধরে যেখানে আছি, কাজ করেছি, লড়াই করেছি কর্মীদের সঙ্গে, সেখানে লড়তে চাই। তবে দলের সিদ্ধান্তই শেষ কথা।" (Lok Sabah Elections 2024)


মেদিনীপুরে এতদিন ধরে একটু একটু করে নিজের জমি তৈরি করেছেন দিলীপ। হঠাৎ করে কেন্দ্র বদলে যাওয়ায় লড়াই কি কঠিন হবে দিলীপের? বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে দিলীপ বলেন, "মেদিনীপুরে যখন আমি গিয়েছিলাম, তখন বিজেপি-ই ছিল না। বিধায়ক, সাংসদ, নেতা রয়েছেন। আজ আর কঠিন লড়াই নয়। আমরা জিততে পারি, ১৮ জন সাংসদ দিয়েছেন বাংলার মানুষ আমাদের লক্ষ লক্ষ কর্মী রয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জ তো রয়েইছে। তবে কীর্তি আজাদকে ক'জন চেনেন? গোটা পশ্চিমবঙ্গ আমার চেনা। সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি। মানুষ আমাকে চেনেন, আমিও চিনি।"


আরও পড়ুন: BJP Candidate List: পদ্মে ফিরে আবারও প্রার্থী অর্জুন, তাপসকেও লোকসভা নির্বাচনে টিকিট দিল বিজেপি


দিলীপকে প্রার্থী করা নিয়ে বিগত কিছুদিন ধরেই বিজেপি-র অন্দরে টালবাহানা চলছিল বলে খবর উঠে আসে একাধিক বার। তবে খেদ নেই দিলীপের। তাঁর যুক্তি, দল যা ভাল মনে করেছে, হয়েছে। সোমবারই বর্ধমান চলে যাচ্ছেন দিলীপ। নির্বাচন পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন তিনি। কিন্তু এতদিন যেখানে লড়াই করলে, একটুও কি অভিমান হচ্ছে না দিলীপের? তিনি জানান, দলের সৈনিক হিসেবে এতদিন সব দায়িত্ব পালন করেছেন। আগামী দিনেও করবেন।


দিলীপের হাত ধরেই রাজনীতির ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন অগ্নিমিত্রা। সেই অগ্নিমিত্রার কাছে চেনা কেন্দ্র হাতছাড়া হওয়ায় কি একটুও অভিমান নেই তাঁর? দিলীপ বলেন, "আমি নেতা এই জন্যই যে মাটি  তৈরি করে বাকিদের জায়গা দিই। বহু লোককে দলে এনে নেতা, বিধায়ক, সাংসদ বানিয়েছি। আমার উপর বিশ্বাস রেখে কঠিন জায়গা দিয়েছে দল।"


প্রার্থিঘোষণার আগে এদিন দিলীপের সঙ্গে দেখা করেন অগ্নিমিত্রা। কী কথা হয় দু'জনের মধ্যে? দিলীপ বলেন, "আশীর্বাদ চাইতে এসেছিলেন। আমি বললাম, যাও, জেতার জন্য মেদিনীপুর তৈরি আছে। লড়াই করো।" দিলীপের আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে অগ্নিমিত্রার বক্তব্য, "আমাদের বিজেপি-তে কেউ কোনও জায়গায় স্থায়ী নন। দিলীপদা কোথায় লড়বেন, আমি কোথায় লড়ব, আদৌ টিকিট পাব কি না, প্রশ্ন ছিল। আমার জন্য এটা বিরাট পাওনা। আমার রাজনীতিতে আসা দিলীপদার হাত ধরে। ওঁর হাত থেকে পতাকা নিই, দিলীপদা আমাকে মহিলা মোর্চার সভানেত্রী করেন, আজ দিলীপদার আসনে আমাকে প্রার্থী করা হল। এটা আমার কাছে বিরাট পাওনা।"


গতকালই অমিত শাহ ফোন করে তাঁকে দিলীপের জায়গায় প্রার্থী হওয়ার কথা জানান বলে জানিয়েছেন অগ্নিমিত্রা। রবিবার তাঁকে ফোন করেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। আগামী দিনে নরেন্দ্র মোদির হাত শক্ত করাই তাঁর লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন অগ্নিমিত্রা। তিনি জানান, দিলীপ অসাধারণ কাজ করেছেন মেদিনীপুরে। সাংগঠনিক ভাবে মেদিনীপুর মজবুত জায়গা। সেখানে নতুন করে তাঁর কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন। 


মেদিনীপুরে জুন মালিয়াকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। জুনকে যদিও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অগ্নিমিত্রা। তবে চোখে চোখ রেখে লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন। বিনা যুদ্ধে একচুলও জায়গা ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন। তবে দিলীপের তৈরি করা জমিতে অগ্নিমিত্রাকে প্রার্থী করা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে আপাতত প্রচারে জোর দিচ্ছেন অগ্নিমিত্রা।