রুমা পাল, কলকাতা : ভুয়ো ভোটার, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কড়া কমিশন। সোমবারই বৈঠকে কমিশনের প্রশ্নের মুখে পড়েন এসপি, জেলাশাসকরা। এরপর মঙ্গলেও ফুল বেঞ্চের বৈঠক হয় মুখ্যসচিব, ডিজি-র সঙ্গে। সেখানে কড়া বার্তা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাঁদের স্পষ্ট বার্তা, রাজ্যের সব রিপোর্টই আমাদের কাছে আছে। কোনও গন্ডগোল হলে দায়ী থাকবেন ডিজিপি'। এবার ভোট চলাকালীন রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা, ভোটারদের সুরক্ষা ও ভোটপরবর্তী হিংসা আটরাতে বজ্র-কঠিন নির্বাচন কমিশন। ভোটপর্ব যাতে নির্বিঘ্নে হয়, সেই দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্যকেই, জানিয়ে দিল কমিশন।
মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠক করে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, 'পশ্চিমবঙ্গ উৎসবের জন্য বিখ্যাত, নির্বাচন হচ্ছে ১৪তম পার্বণ, গণতন্ত্রের উৎসব। তা অবাধ, শান্তিপূর্ণ, হিংসামুক্ত হোক, সেটাই আমাদের লক্ষ্য'
২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন থেকে ২০২৩ এর পঞ্চায়েত ভোট, প্রতিবারই ভোট-হিংসায় রক্তাক্ত হয়েছে বাংলার মাটি। তাই এবার এই বিষয়ে বাড়তি নজর দিয়েছে কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'আমরা চাই সব মানুষ যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। সব রাজনৈতিকদলই চায় অবাধ নির্বাচন'।
সোমের মত মঙ্গলবারও আমলাতন্ত্র যাতে নিরপেক্ষভাবে ভাবে কাজ করে তাই নিয়েও বার্তা দিয়েছে কমিশন। তাদের স্পষ্ট বার্তা, ' রাজ্য পুলিশ থাকবে কারণ রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের'। কমিশনের দাবি, এখানে ভোট দেওয়া আটকানোর জন্য হিংসার আশ্রয় নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাই তাদের লক্ষ্য, ' ভোট পূর্ববর্তী এবং ভোট পরবর্তী হিংসা রোধ করার চেষ্টা করব আমরা। নির্বাচনে কোনওরকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। পেশী শক্তি এবং আর্থিক ক্ষমতার ব্যবহার যাতে না হয় সেটা আমরা নজর রাখব।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ও ভোটারদের সুরক্ষার স্বার্থে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে কমিশন। কোনও গন্ডগোল হলে কমিশনকে জানানো যাবে এই অ্যাপ মারফতই । আর তার ১০০ মিনিটের মধ্যে কমিশনের টিম পৌঁছে যাবে সেখানে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান,
সব কেন্দ্রীয় এজেন্সিদের নিয়ে একটি পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনে আর্থিক দুর্নীতি আটকাতে এই পোর্টালের সাহায্য নেওয়া হবে।
কমিশন জানায়, আধারকার্ড বাতিল হলেও যাতে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন, সেদিকে নজর রাখতেও নির্দেশ কমিশনের। কমিশন জানিয়েছে, রাজ্যের সব হেলিপ্যাডে কড়া নজর রাখা হবে। সব এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি একসঙ্গে সমঝোতায় কাজ করবে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে বলে দেওয়া হয়েছে সব রাজনৈতিক দলকেই প্রয়োজনে সাহায্য় করতে হবে। সেই সঙ্গে কমিশন জানায়, 'কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে এবং তাদের কোনওরকম পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই মোতায়েন করা হবে। সিইও, রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার এবং কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মিলে ঠিক করবেন কীভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হবে'
এছাড়াও কমিশন জানিয়েছে, 'রাজ্যে মোট বুথের সংখ্যা ৮০ হাজার ৪৫৩। এর মধ্যে বেশ কিছু মহিলা পরিচালিত বুথও থাকবে। প্রতিটি বুথে শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থা, হুইল চেয়ার থাকবে। যাঁদের বয়স ৮৫ বছরের বেশি, তারা চাইলে বাড়ি থেকে ভোট দিতে পারবেন।
এছাড়াও কমিশন জানিয়েছে, একদিনে ভোট হবে কিনা সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।