কলকাতা: বিচারপতি থেকে বিজেপি নেতা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay)। অবসরগ্রহণের পরে ডাক এসেছিল কংগ্রেস থেকে, সিপিএম থেকেও। কিন্তু তিনি যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তারপরেই 'ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন' অনুষ্ঠানে এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে'র মুখোমুখি বিজেপি নেতা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। 


বিচারপতি থাকাকালীন বহুবার এমন হয়েছে যে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে 'কমরেড' বলে সম্বোধন করেছেন তৃণমূল নেতারা। সিপিএম-এর সঙ্গে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে অভিযোগ করতেন তাঁরা। সিপিএম নেতা ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গ তাঁর মুখে এসেছে এর আগে 'ঘন্টাখানেক সঙ্গে সুমন' অনুষ্ঠানে। তারপর থেকেই আরও বেশি হয়েছে সেই অভিযোগ। কিন্তু তিনি যোগ দিলেন পদ্মশিবিরে। কেন? সিপিএম-থেকে কী প্রস্তাব আসেনি? কেন সিপিএমে গেলেন না তিনি? খোলসা করলেন তিনি নিজেই।  


১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট আসে। তারপর কিছুদিন ভাল চলছিল বলেই জানিয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। কিন্তু তারপরেই নাকি ছন্দপতন। তিনি বলছেন, 'তারপর দখল করে নেয় দুবৃত্তরা। ছোটখাট জেলার সেক্রেটারি স্তরের লোকজন রাজ্য কমিটিকে বলতে আপনাকে ১৭টা কি ৩০টা আসন দেব। আপনি আমাদের চালাতে দিন। কানে আসে এমনই। সত্যি কি না জানি না।' তবে তাঁর মতে সাধারণ মানুষকে রাজনীতিতে টেনে আনতে পেরেছিল বামফ্রন্ট।'


১৬ বছরে বাবাকে হারান অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বাবা বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বাবার কাকা হাওড়া জেলার কৃষকসভার অন্যতম সদস্য ছিলেন। তাঁর পরিবারের অনেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একটি অভিজ্ঞতার কথাও বলেন তিনি, 'আমার তুতো ভাই বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি মেসেজ পাঠিয়েছেন আমি মর্মাহত। আমি লিখলাম কেন? উত্তর পাইনি এখনও।'


তাহলে তিনি অন্যপথে কেন? (Abhijit Ganguly on CPIM)
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও বিজেপি নেতা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'বাবার মৃত্যুর পরে কিছু ডায়েরি হাতে আসে। দেখেছিলাম বাবা কীভাবে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর খুব দুঃসময় চলছিল আমাদের। আমি সামান্য একটা চাকরি চেয়েছিলাম, আমার হয়নি। অন্য অনেকের হয়ে গিয়েছিল।' তাহলে কি এটাই মোহভঙ্গের কারণ? তিনি বলছেন, 'চাকরি পেলেই বামফ্রন্ট করতাম নয়তো করলাম না এমনটা নয়।' 


তাঁর চোখে বাম দলগুলির কোনও সমস্যা রয়েছে এখন? বাম দলের সঙ্গে বাম মনোভাবাপন্ন মানুষের তফাৎ তৈরি হয়েছিল? উত্তরে সহমত পোষণ করেছেন তিনি। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, 'সমরেশ বসু, সলিল চৌধুরী, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এমন বহু মানুষ ছিলেন যাঁরা বামপন্থার থেকে সরে গেলেন। কেন সরে গেলেন, তার কোনও বিশ্লেষণ হয়েছে কি?' 


যে কোনও শিল্পীদের দলীয় অনুশাসন মানতে গেলে শৈল্পিক সত্ত্বা বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেক্ষেত্রে তাঁর কাছে দলীয় অনুশাসন ফাঁস হবে না তো? এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে'র এই প্রশ্নে তাঁর সটান জবাব, 'হবে না। আমি তো সব জেনেশুনেই এসেছি।'


সিপিএম নিয়ে কী ভাবেন?
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও বিজেপি নেতা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay Exclusive) বলেছেন, 'আমি কেন বাম দলে গেলাম না? কেন একটা আসন থেকে প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও দাঁড়ালাম না? সিপিআইএম-এর চলন অত্যন্ত ভজকট বলে মনে হয়েছে। সেটা আমায় দূরে সরিয়ে দেওয়ার অন্যতম বড় কারণ।' পাশাপাশি টেনে এনেছেন ধর্মাচরণের প্রসঙ্গও। বলছেন, 'আমি ধর্মাচরণ পালন করি। আমি উপরওয়ালায় বিশ্বাস করি। যেটায় সিপিআইএম বিশ্বাস করে না। আমি ইচ্ছে করেই কমিউনিস্ট কথাটা বললাম না। আমার সন্দেহ আছে এরা কমিউনিস্ট কি না।' তবে সিপিএমের মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায় এবং তরুণ ব্রিগেডের রাজনৈতিক কাজের ঢালাও প্রশংসা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে।


আরও পড়ুন: প্রথমবার UPSC দিয়েই সারা ভারতে ব়্যাঙ্ক ৯৪, কীভাবে সফল হলেন তমালি?