সুনীত হালদার, আমতা : ফের চর্চায় আমতার প্রতিবাদী ছাত্রনেতা আনিস খানের পরিবার। কারণ, এবার পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে নামলেন আনিসের মেজো দাদা শামসুদ্দিন খান। সিপিএমের হয়ে পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। কুশবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আমতা ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ৪১ নম্বর আসনে শামসুদ্দিন খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।


‌‌‌‌‌গত বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যের অন্যতম চর্চিত নাম আনিস খান। অভিযোগ, পুলিশকর্মীরা তাঁর খোঁজে বাড়িতে এসে ছাদ থেকে তাঁকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল। এর জেরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। যদিও তদন্তে উঠে এসেছে আনিস খান পালাতে গিয়ে পড়ে যান, তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতি একসময় তোলপাড় হয়। তাঁর মৃত্যুর সঠিক তদন্ত এবং দোষীদের সাজা চেয়ে একসময় সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য। রাজপথ থেকে গ্রামের রাস্তা সর্বত্রই এই ইস্যুতে বামেরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে। প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে তাদের শাস্তির দাবিতে বাম এবং কংগ্রেস আমতার গ্রাম সারদাতেই নয়, কলকাতার রাজপথেও মিছিল-মিটিং করেছে। রাজ্য সরকার প্রথমে এক ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিককে দিয়ে তদন্ত করায়। পরে সিট গঠন করে। কিন্তু, আনিসের পরিবার সিবিআই তদন্তে অনড় থাকে ও বর্তমানেও রয়েছে। 


ছেলের মৃত্যুর বিচার পেতে আনিস খানের বাবা সালেম খানকে সিপিএম এবং তাদের শাখা সংগঠন এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং সারা ভারত কৃষক সভার বিভিন্ন  মঞ্চে দেখা যায়। এমনকী তিনি সাগরদিঘির উপনির্বাচনে বায়রন বিশ্বাসের হয়ে সাগরদিঘিতে প্রচারেও গিয়েছিলেন। এবার সরাসরি রাজনীতির ময়দানে তাঁর পরিবার। আনিস খান খুনে দোষীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত জনগণের পঞ্চায়েত গড়ার ডাক দিয়েছে তাঁর পরিবার । সালেম খান বলছেন, তাঁর ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করত। তাই তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে মেজো ছেলে শামসুদ্দিন খানকে ভোটে দাঁড় করিয়েছেন। ছোট ছেলের মৃত্যর বিচার এখনও তিনি পাননি।


তিনি এ ব্যাপারে সিবিআই তদন্ত চান। তাঁর বক্তব্য, 'দুর্নীতিগ্রস্ত' তৃণমূল কংগ্রেসকে সরিয়ে সিপিএমের পঞ্চায়েত গড়তে চান। মানুষের যে ভালবাসা পেয়েছেন তাতে তিনি জেতার ব্যাপারে আশাবাদী। সিপিএম প্রার্থী শামসুদ্দিন বলেন, 'ভাইয়ের খুনের ন্যায়বিচার পেতেই সিপিএমের প্রার্থী হয়ে লড়ছি। একইসঙ্গে তৃণমূলের পঞ্চায়েতে এত দুর্নীতি যে মানুষ তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই তাদের সরাতে হবে। কাটমানির বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদ থাকবে। আমরা মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে চাই। আর মানুষের যে ভালবাসা পাচ্ছি তাতে জেতার ব্যাপারে ১০০ শতাংশ আশাবাদী। তৃণমূলের রিগিং রুখে দেব।'


যদিও তৃণমূল প্রার্থী কলিম খান তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির কাজের নিরিখে এবং সারা বছর মানুষের পাশে থাকার জন্য আমরা জিতব। এলাকায় আনিস খানের মৃত্যু কোনও ফ্যাক্টর নয়।'