নয়াদিল্লি: লোকসভার আসনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণে নিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। আর তার দৌলতেই লোকসভায় বিরোধী দলনেতা নির্বাচনের অধিকার পেয়ে গেল তারা। এবাররে লোকসভা নির্বাচনে ৯৯টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস। নিয়ম অনুযায়ী, লোকসভা ১০ শতাংশ আসন অধিকৃত দলই প্রধান বিরোধী দলের তকমা পায়। পাশাপাশি, বিরোধীদের দলনেতা বাছার অধিকারও পায় তারাই। সেই অনুযায়ী, এবারে কংগ্রেসই বিরোধী দলনেতা বাছার অধিকারী। (Leader of Opposition)
২০১৪ সাল থেকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদটি শূন্য পড়ে রয়েছে। কারণ বিজেপি-র একাধিপত্যে গত দু'বছর বিরোধী শিবিরের কোনও দলই সংসদে ১০ শতাংশ আসন পেতে সফল হয়নি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ৪৪টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। ২০১৯ সালে লোকসভায় তাদের আসনের সংখ্যা ছিল ৫২টি। (LoP in the Lok Sabha)
২০১৯ সাল থেকে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার দায়িত্ব পালন করছিলেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। কিন্তু এবারে বহরমপুর আসনে পরাজিত হয়েছেন অধীর। তাই কংগ্রেস বিরোধী দলনেতা বাছার অধিকার পেলেও, অধীরকে সেই ভূমিকায় পাওয়া যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে লোকসভায় I.N.D.I.A জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব কে পান, সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: Narendra Modi: নেহরুকে ছোঁয়ার পথে মোদি, ৩য় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তুতি, শনিবারই কি শপথ!
লোকসভার প্রথম স্পিকার জিভি মাভালঙ্কার ১০ শতাংশ নীতি চালু করেছিলেন। লোকসভার অধিবেশন চালাতে, কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রেও ১০ শতাংশ সাসংদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছিলেন তিনি। প্রধান বিরোধী দল বাছার ক্ষেত্রেও এই নীতিকেই শর্ত স্বরূপ প্রয়োগ করা হয়।পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে তদানীন্তন জনতা সরকার সংসদীয় আইনের দ্বারা লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদটিকে বিধির আওতায় আনা হয়। সেখানে যদিও ১০ শতাংশের কোনও উল্লেখ ছিল না বলে দাবি লোকসভার প্রাক্তন ডিরেক্টর তথা নাগাল্যান্ড বিধানসভার প্রাক্তন সচিব পিজে অ্যান্টনির।
লোকসভার বিরোধী দলনেতার ভূমিকা সংসদীয় রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংসদের পাবলিক অ্য়াকাউন্ট কমিটি, পাবলিক আন্ডারটেকিং এবং যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য হন তিনি। সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন, সেন্ট্রাল ইনফরমেশন কমিশন, সিবিআই ডিরেক্টর, জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনের চেয়ারপার্সন, লোকপাল বাছার যে কমিটিতেও শামিল থাকেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা। এবার সেই অধিকার পাওয়া পথে কংগ্রেস।
কিন্তু কাকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতা করবে কংগ্রেস? দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে রাজ্যসভায় বিরোধীদের দলনেতা। কংগ্রেসের একটি সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, দু'-দু'টি পদযাত্রা করার পাশাপাশি, আদানি-আম্বানি থেকে মণিপুর নিয়ে গত কয়েক বছরে যেভাবে সংসদে ধারাল ভাষণ দিয়েছেন রাহুল গাঁধী, সেক্ষেত্রে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় তাঁকে বিরোধীদের নেতা হিসেবে এগিয়ে দেওয়া হতে পারে। রাহুল যদি সেই দায়িত্ব নিতে রাজি না হন, সেক্ষেত্রে শশী তারুর, মণীশ তিওয়ারি বা কেসি বেণুগোপালকে এগিয়ে দেওয়া হতে পারে।
কংগ্রেসের সংসদীয় দলের যে সংবিধান রয়েছে, চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধীই বিরোধী দলনেতা বেছে নিতে পারেন যেমন, তেমনি তার জন্য যোগ্য়তা প্রমাণের ডাকও দিতে পারেন। ১৯৬৯ সালে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে সেবার মোরাজি দেসাই ১৬৯টি ভোট পান, ইন্দিরা গাঁধী পান ৩৫৫ জনের সমর্থন। ওই রেষারেষির জেরেই শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সংগঠন দু'টুকরো হয়ে যায়।