আবির দত্ত, ঝিলম করঞ্জাই ও সত্যজিৎ বৈদ্য, কলকাতা: ব্রিগেডের সমাবেশে অধীর চৌধুরীর উপস্থিতিতেই কংগ্রেসের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিলেন আইএসএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকি। মঞ্চে তিনি বলেন, ভাগীদারি করতে এসেছি, তোষণ নয়।  মঞ্চ থেকে নেমে ফের কংগ্রেসের উদ্দেশে সুর চড়ান তিনি। যদিও, কংগ্রেস এতে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।


সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বললেন, আজ বামেদের সঙ্গে কংগ্রেস,আইএসএফ। এটাই তো আমাদের দেশ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বললেন, আগামী দিনে তৃণমূল বিজেপি থাকবে না। সংযুক্ত মোর্চা থাকবে।


ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকির বার্তা, যেখানে যেখানে শরিক প্রার্থী দেবে, কী হয়েছে ,না হয়েছে, সব ভুলে এই বিজেপি আর বিজেপির বি টিম মমতাকে উৎখাত করে ছাড়ব।


ভোটের আগে ভরা ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে, প্রত্যেকের গলাতেই উঠে এল জোটের বার্তা। একজোটে সকলে ডাক দিলেন রাজ্যে পরিবর্তনের। কিন্তু, তার মধ্যে কিছুটা হলেও তাল কাটল কংগ্রেসের উদ্দেশে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ-র প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকির বার্তায়।


বামেরা যেভাবে আইএসএফ-কে আসন ছেড়েছে, রবিবার ব্রিগেডের বক্তৃতায় বারবার তার প্রশংসা করেন আব্বাস। তিনি বললেন, মানুষের স্বার্থে আমরা যে তালিকা দিয়েছে, তার বেশিরভাগ মেনে নিয়েছে বামেরা। যেখানে যেখানে বাম শরিক দল প্রার্থী দেবে, মাতৃভূমিকে রক্ত দিয়ে হলেও স্বাধীন করব।


কিন্তু, জোটের আরেক শরিক কংগ্রেসের কথা একবারও উল্লেখ করেননি তিনি। বক্তব্যের শেষ অংশে এর ব্যাখ্যাও দেন। বলেন, অনেকে ভাবতে পারেন, কংগ্রেসের নাম নিচ্ছি না কেন? ভাগীদারি করতে এসেছি। পিছিয়ে পড়া মানুষের হক বুঝে নিতে হবে। কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোর দরজা খোলা। তাদের হয়েও আব্বাস সিদ্দিকি লড়াই করবে।


জোটে সিপিএমের তরফে আইএসএফ-কে ৩০টি আসন ছাড়া হয়েছে। কংগ্রেসের কাছে ১০টি আসন চেয়েছে আইএসএফ-কে।


কিন্তু, তা নিয়ে এখনও রফা হয়নি। শনিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমদের সঙ্গে এনিয়ে বৈঠকে বসেন অধীর চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য ও আব্দুল মান্নানরা। সূত্রের খবর, আইএসএফ-কে আসন ছাড়ার প্রসঙ্গ উঠতেই সিপিএমের কাছে আরও ১৮টি আসন দাবি করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।তিনি বলেন, ১১০টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়া হোক। সেখান থেকে ৫-৬টি আসন আইএসএফ-কে ছাড়া হবে।


এই টানাপোড়েন নিয়েই রবিবার ব্রিগেড ছাড়ার সময় কড়া বার্তা দেন আইএসএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস। মঞ্চের নীচে তিনি বললেন, সনিয়া চাইলেও এরাজ্যে ঢিলেমি হচ্ছে। দু-এক দিন দেখে প্রার্থী ঘোষণা করে দেব।


 


কংগ্রেস অবশ্য আইএসএফ-এর বক্তব্যে গুরুত্ব দিচ্ছে না।অধীর চৌধুরী বলেছেন, আমাদের জোট সিপিএমের সঙ্গে। আইএসএফ কী বলল কিছু যায় আসে না।মহম্মদ সেলিম  বলেছেন, আলোচনা চলছে। জোট মসৃণ করার কাজ করবে বামেরা।


তৃণমূল-বিজেপি আবার কথার ধারে জোটে চিড় ধরানোর চেষ্টা করছে।


রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, সেলিমের অভ্যর্থনায় ভাইজানের ব্রিগেড দেখলাম। ভাইজানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে কংগ্রেস-সিপিএম। কারোর মুখে বন্দেমাতরম শোনা গেল না।


তৃণমূল নেতা ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, কিছু ডেডিকেটেড লোক থাকে, তারা এল। তবে তার মানে এই নয় যে তারা মানুষের সমর্থন পেয়ে গেল।


২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের টানাপোড়েনে জোট সম্ভব হয়নি। এবার বাম-কংগ্রেসের জোট হয়ে গেলেও, আইএসএফ-এর সঙ্গে কংগ্রেসের টানাপোড়েন সেই রয়েই গেল। এবার জল কোনদিকে গড়াবে, সেদিকেই নজর সকলের।