ইটানগর: ভোট নাগরিকের একটি মৌলিক অধিকার। এই অধিকার ভারতের প্রতিটি নাগরিকের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। গণতান্ত্রিক ভারতে ১৮ উর্ধ্ব যে কোনও নাগরিকই তার মতদানের সুযোগ পান। এবং তার মতদানের জন্য রাষ্ট্রই সমস্ত বন্দোবস্ত করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান রচনার পর থেকে এখনও পর্যন্ত এই পন্থাই অবলম্বন করা হচ্ছে। এমনকি নাগরিকের মতদানের অধিকার প্রয়োগের জন্য প্রচারেও নামে সরকার। এই তো দিন কয়েক আগেই দেশের ভোটারদের নিজের মতদানের পক্ষে জোরাল সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ক্রীড়াব্যক্তি থেকে রূপালি দুনিয়ার কলা কুশীলব সহ রাজনৈতিক বিরোধীদেরও নতুন ও পুরাতন ভোটারদের উজ্জীবিত করার আহ্বান দিয়েছেন তিনি। সেই ডাকে সাড়াও দিয়েছেন অনেকে।


একজন ভোটারকেও ফেরানো যাবে না। গণতন্ত্রের উত্সবে সবাইকে সামিল করতে দেশের প্রতিটি কোণায় পৌঁছবে নির্বাচনী কর্মীরা। এই অঙ্গিকারেই একজন ভোটারের ভোট আদায় করতেও প্রয়োজনে একদিন পর্যন্ত হাঁটবেন তারা। দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে আনা যায় অরুণাচল প্রদেশেকেই। চিন লাগোয়া এই রাজ্যে এমন অনেক ভোটকেন্দ্র আছে, যেখানে পৌঁছতে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমাটার পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয় নির্বাচনী কর্মীদের। অনজাও জেলার মালোগাম অঞ্চলের কথাই ধরে নেওয়া যাক। জেলা সদর দফতর হায়ুলিয়াং থেকে প্রায় ৩৯ কিলোমিটার ভিতরে এই গ্রাম। এখানে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারই থাকে। তাদের বেশিরভাগই আবার নিজেদের প্রয়োজনে বুথ পরিবর্তন করিয়েছে। এবার এই অঞ্চলে ভোটার রয়েছে মাত্র একজন। ৩৯ বছরের সোকেলা টায়াঙ্গই এই অঞ্চলের একমাত্র ভোটার। ২০১৪ সালে তার স্বামীও এই অঞ্চলের ভোটার ছিল। সেও এবার বুথ বদল করেছে। যার ফলে মালোগামের এই অঞ্চলের একটি ভোট আদায় করতে এবারও যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।


অরুণাচল প্রদেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, “২০১৪ সালে এই ভোটকেন্দ্রে কেবল ২ জন ভোটার ছিল। এবার সোকেলার স্বামী এবার বুথ পরিবর্তন করেছে।” অর্থাত্ ওই বুথে এবার ভোট দেবে স্রেফ একজন ভোটার। তার জন্যও সমস্ত বন্দোবস্ত করবে নির্বাচন কমিশন। ১১ এপ্রিল প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার এবং নিরাপত্তী রক্ষী, সবাই সেখানে উপস্থিত থাকবেন এবং ভোটের সমস্ত নিয়ম মেনেই ওই বুথে ভোট হবে বলে জানিয়েছেন অরুণাচল প্রদেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। তিনি আরও জানান, “ভোটের দিন সকাল ৭টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অফিসাররা থাকবেন। আমরা এটাও জানি না, কখন ভোটার ভোট দিতে আসবে। একটু তাড়াতাড়ি ভোট দিয়ে যাওয়ার কথাও কেউ বলতে পারবে না।”


প্রসঙ্গত, এবার অরুণাচলে একই সঙ্গে বিধানসভা ও লোকসভা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই রাজ্যে নথিভুক্ত ভোটার রয়েছে মোট ৭ লাখ ৮৪ হাজার। যার মধ্যে ৪ লাখই মহিলা। এখানে এমন অনেক বুথ আছে যেখানে ভোটার সংখ্যা দশেরও অধিক নয়। ২২০২টি এমন বুথের কথা নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যেখানে ভোটার সংখ্যা মাত্র ১০। তিনশোর কাছাকাছি বুথ রেয়েছে, যেখানে ভোটার ১০০ জনেরও কম। ২০০ জন ভোটারও নেই, এমন বুথের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশো।