আমেদাবাদ: বয়স ৯১। সংসদীয় রাজনীতিতে এই মুহূর্তে তিনিই বয়োজ্যেষ্ঠ। শাসক-বিরোধী যুযুধান দুই পক্ষের কাছেই তিনি ‘মার্গদর্শক’। ১৯৯১ থেকে লোকসভার সাংসদ তিনি। গুজরাতের গাঁধীনগর তাঁর গড়। ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচন বাদ দিলে এখনও পর্যন্ত সব কটি নির্বাচনেই ওই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং জিতেছেন তিনি। সেবার বাবরি কাণ্ডে অভিযুক্ত হওয়ায় নির্বাচন লড়েননি তিনি। তাঁর পরিবর্তে গাঁধীনগর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। ওই নির্বাচনে লখনৌ ও গাঁধীনগর ২টি আসন থেকেই লড়েছিলেন বাজপেয়ী এবং জিতেওছিলেন তিনি। পরে ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৯ ও ২০১৪- টানা পাঁচ বার গাঁধীনগর থেকেই জিতে সাংসদ নির্বাচিত হন লালকৃষ্ণ আডবাণী। একটা সময় বিজেপি মন্ত্রিসভায় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। কাজ করেছেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর ডেপুটি হিসেবেও। এহেন বর্ষীয়ান নেতা নাকি এবার আর ভোটে লড়বেন না।
কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, গাঁধীনগর থেকে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। গুজরাত বিজেপির একটি গোষ্ঠী এমনটাই চাইছে বলে সূত্রের খবর। তবে ঠিক কী কারণে লালকৃষ্ণ আডবাণী ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না, সে বিষয়ে এখনই পরিষ্কার করে কিছু জানা যায়নি। আডবাণীর আপ্ত সহায়ক দীপক চোপড়া যদিও জানিয়েছেন, ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি বিজেপির এই ‘লৌহমানব’। পিটিআই-কে তিনি বলেছেন, “দলের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তিনি নিজেও দলকে কিছু বলেননি। দলের পক্ষ থেকে কোনও বার্তা আসার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।” আবার গুজরাত বিজেপিরই একপক্ষ মনে করছে বয়সের কারণেই আর ভোটে লড়বেন না লালকৃষ্ণ আডবাণী। গুজরাতের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেতা নিমাবেন আচার্য অবশ্য বলছেন, “নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে কোনও নেতাই গাঁধীনগর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আবেদন করেনি। বরং অনেকেই চাইছেন ওই আসনে আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক।”
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই লালকৃষ্ণ আডবাণী সহ মুরলীমনোহর জোশীর মতো বর্ষীয়ান নেতাদেরকে কার্যত ‘একঘরে’ করে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সংসদ হলেও বারাণসী থেকে সরিয়ে কানপুর থেকে টিকিট দেওয়া হয় জোশীকে। অন্যদিকে, গাঁধীনগর থেকে জিতে এলেও মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি আডবাণীকে। বরং দলের প্রবীন নেতাদের নিয়ে ‘মার্গদর্শক মণ্ডল’ গঠন করেন মোদি-শাহ। সরকার ও দলের প্রয়োজনে নীতি নির্ধারণের কাজ করবে এই ‘মার্গদর্শক মণ্ডল’, এমনটাই বলা হয়। তবে বিগত পাঁচ বছরে উপলক্ষ ছাড়া সেভাবে সামনেই আসেননি ‘মার্গদর্শকরা’। এই পরিস্থিতিতে লালকৃষ্ণ আডবাণীর ‘স্বেচ্ছা নির্বাসন’ বেশ ইঙ্গিতবহ বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের।