সুনীত হালদার, হাওড়া: হাওড়ায় (Howrah Lok Sabha Poll) আমতায় তৃণমূলের দাপটে ঘরছাড়া তৃণমূলই (TMC)। উলুবেড়িয়া উত্তরের বিধায়ক নির্মল মাজি ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা গত ৩ বছর ধরে আমতার চন্দ্রপুরের প্রায় ৭০টি পরিবারকে বাড়িছাড়া করে রেখেছেন বলে অভিযোগ। অভিযোগকারীদের দাবি, তাঁরা সকলেই তৃণমূলের কর্মী, সমর্থক। অভিযোগ, একশো দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কাটমানি দিতে অস্বীকার করায়, তাঁরা তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজির রোষের মুখে পড়েন।


কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশের পরেও, আমতা থানার পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেননি বলে দাবি করেছেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকরা। গতকাল বাড়ি ফিরতে চেয়ে জেলাশাসকের কাছে ডেপুটেশন জমা দিয়েছেন তাঁরা। ওই ঘরছাড়ারা সমাজবিরোধী, বিরোধী দলের সঙ্গে যুক্ত, অভিযোগকারীদের তৃণমূল-যোগ অস্বীকার করে দাবি নির্মল মাজির।



তৃণমূলের বিধায়ক। তাঁর বিরুদ্ধে কাটমানি চাওয়ার অভিযোগ। যাঁরা অভিযোগ তুলছেন তাঁরা বিরোধী কোনও দল নয়। তৃণমূলেরই কর্মী। ভোটের আগে হাওড়ায় উঠল এমনই অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়। মারধর, বাড়ি ভাঙচুর, ঘরছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, এটাও অভিযোগ যে হাইকোর্টের রায় নিয়েও ঘরে ফিরতে পারেননি ৬৭টি পরিবার।



উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভার চন্দ্রপুর। এখানে দীর্ঘ তিন বছর ধরে ঘরছাড়া ৬৭ টি তৃণমূল সমর্থক পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজের মতো সরকারি প্রকল্পে প্রাপ্ত টাকা থেকে কাটমানি না দেওয়ার জন্য় তৃণমূল বিধায়ক এবং তাঁর অনুগামীদের চক্ষুশূল তাঁরা। 


এক অভিযোগকারিণী বলছেন, 'টাকা পয়সা মেরে খাচ্ছে তৃণমূলর লোকেরা। মেরে খাচ্ছে। বলতে গেলেই মারছে।' বলছেন, 'জব কার্ডের কথা বলতে গেলে... ঘর এলে পড়ে ঘরের টাকা নিয়ে নেবে। প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের মারধর করতে আসে, বাড়ি ছাড়া করে দেয়। চারবছর ধরে বাচ্চাদেরকে নিয়ে বাড়ির বাইরে আছি।' তৃণমূলই আবার বাড়ি ছাড়া করেছে কেন? তাঁর জবাব, 'ওই তো টাকা পয়সা দিলেই ভাল নয়তো খারাপ।'


অভিযোগকারীদের পাল্টা সমাজ বিরোধী বলে কটাক্ষ উলুবেড়িয়া উত্তরের তৃণমূল বিধায়কের। তিনি বলেন, 'ওঁরা সব সমাজবিরোধী, ওঁরা বোমা বাঁধে। অসমাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। ওরা বিভিন্ন দল করে।' উলুবেড়িয়া উত্তরের বিজেপি প্রার্থী অরুণ উদয় পাল চৌধুরী বলেন, 'এরা পুলিশের সহযোগিতায় অত্য়াচাপ করে। আমরা ঘরছাড়াদের ঢোকাব।'


বাড়ি ফিরে পেতে ২০২২ সালে হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিল ক্ষুব্ধ তৃণমূল সমর্থকরা। ২০২৪ এর এপ্রিল মাসে ঘরে ফেরার রায় এলেও তাঁদের দাবি এখনও রাস্তায় কাটাতে হচ্ছে দিন।  সহযোগিতা করছে না আমতা থানা, অভিযোগ এমনটাও। বাধ্য় হয়ে মঙ্গলবার মিছিল করে হাওড়া জেলা শাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন তাঁরা। হাওড়ার জেলাশাসক দীপাপপ্রিয়া পি জানিয়েছেন, অফিসে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যাতে ঘরে থাকতে পারেন এবং ভোট দিতে পারেন তার জন্য প্রশাসন থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


একদিকে যখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ১০০ দিনের বকেয়া সহ আবাস যোজনার বাড়ির টাকা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছে তৃণমূল সরকার। তখন ভোটের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই উঠছে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।  


আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশে চাকরিহারারা কি ভোটের দায়িত্বে? কী বলছে কমিশন?